ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় জোড়া খুন ও গণধর্ষণ

মূল হোতা পিটিল ৫ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৫
মূল হোতা পিটিল ৫ দিনের রিমান্ডে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানাধীন বুড়ো মৌলভীর দরগাহ এলাকায় জোড়া খুন ও গণধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি আবু সাঈদ হোসেন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় খুলনা মহানগর হাকিম ফারুক ইকবালের আদালতে ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি প্রদান করে তিনি।

তবে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুল ইসলাম পিটিল মুখ খোলেনি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ৠাব-৬ খুলনার একটি দল মাগুরা জেলার সদর থানাধীন ভাইনার মোড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। পরে তাদের লবণচরা থানায় হস্তান্তর করে।

জোড়া হত্যা ও গণধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লবণচরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী বাবুল হোসেন জানান, আসামি পিটিল ও সাঈদকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জোড়া হত্যা ও গণধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে। কিন্ত সাঈদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলেও দুর্ধর্ষ কিলার পিটিল রাজি হয়নি।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে সাঈদকে মহানগর হাকিম ফারুক ইকবালের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সে ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।

সাঈদের জবানবন্দি’র উদ্বৃতি দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, বাবা ইলিয়াস চৌধুরী ও মেয়ে পারভীন সুলতানা বুড়ো মৌলভী’র দরগা সড়কের বাড়িতে বসবাসের সূত্র ধরে পিটিল, সাঈদ ও লিটনসহ স্থানীয় যুবকরা নানাভাবে তাদের উত্যক্ত করতো। কেউ মেয়েকে যৌন হয়রানি আবার কেউ তার বৃদ্ধ বাবার কাছে অর্থ ধার চাইতো।

মূলত এসব বিষয় নিয়েই তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। এর মধ্যে কয়েক মাস আগে মেয়ে পারভীন সুলতানা বুড়ো মৌলভী’র দরগা সেতুতে উঠলে পিটিলসহ অন্যরা তার ওড়না ধরে টান দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পারভীন হাতে থাকা টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে তাদের আঘাত করে। এতে পিটিলসহ তারা ৫ জন প্রতিশোধ নেওয়ার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় মই দিয়ে দেয়াল টপকে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে।

দরজা খোলা থাকায় তারা ঘরে ঢুকে প্রথমেই বাবা ইলিয়াস চৌধুরীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তার চিৎকারে মেয়ে পারভীন এগিয়ে গেলে তাকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। পরে ঘরের বাইরে সেফটিক ট্যাংকির মধ্যে ফেলে মরদেহ গুমের চেষ্টা করে তারা। বিকেল ৪টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটিয়ে যাওয়ার সময় তারা আলমারি থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে এ টাকা ভাগাভাগি করে যে যার মতো চলে যায়।

এদিকে, ঘটনার মূল পরিকল্পকারী সাইফুল ইসলাম পিটিল স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম ফারুক ইকবাল ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে লবণচরা থানা হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর লবণচরা থানা এলাকার হযরত বুড়ো মৌলভী (রহ.) দরগাপাড়া ৩নং সড়কের ‘ঢাকাইয়া হাউজ’ নামক বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ইলিয়াস চৌধুরী ও তার মেয়ে পারভীন সুলতানাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর মরদেহ বাথরুমের সেফটিক ট্যাংকির মধ্যে ঢুকিয়ে গুমের চেষ্টা করে। পারভীন সুলতানা এক্সিম ব্যাংক খুলনার কালিবাড়ী শাখায় ক্যাশ কর্মকর্তা ছিলেন।

এ ঘটনায় নিহত ইলিয়াস চৌধুরী’র ছেলে রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব বাদী হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর লবণচরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামি লিটন আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যা ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করায় পারভীন সুলতানার ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব বাদী হয়ে ২২ সেপ্টেম্বর লবণচরা থানায় নতুন করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি লিটন, পিটিল তার ভাই শরিফুল ইসলাম, একই এলাকার পলাশ এবং সাঈদকে আসামি করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৫
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।