ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সড়ক যেন মগের মুল্লুক

হাসিবুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
সড়ক যেন মগের মুল্লুক ছবি: রাজীব- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি এখন সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কেবল মানুষকে চরম ভোগান্তিতেই ফেলছে না, নগরবাসীকে ‘আটকে’ রেখে এ যানজট প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট করছে, যাতে হিসাবে রাষ্ট্রের হাজারো কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।

পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন অভিযোগও করতে ভুলে যাচ্ছেন নগরবাসী।

দুঃসহ ভোগান্তির এ যানজটের কারণ খুঁজতেই দেখা যাচ্ছে, সড়কের মধ্যে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে গণপরিবহনগুলোর যাত্রী ওঠানো-নামানো প্রধানভাবে যানজট সৃষ্টিতে দায়ী। তাছাড়া, শহরের আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় সড়কের পরিমাণ মাত্র আট শতাংশ। এর মধ্যে কোনো সড়কে যদি এলোমেলোভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হয়, তখন পরিস্থিতিটা কী দাঁড়ায়- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর অনেক আগ থেকেই রাজধানীর প্রায় সব সড়কের ফুটপাতই দখলবাজদের হাতে, পথচারীদের হাঁটার জায়গাও বন্ধ। এর সঙ্গে রয়েছে সড়কের পাশের অধিকাংশ বিপণীবিতানের রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং ‘ব্যবস্থা’।

১১ অক্টোবর দুপুরে সরেজমিনে নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার সড়কের ওপর জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিরপুরগামী পাঁচ-সাতটি বাস। সড়ক যেন মগের মল্লুক। অথচ এ সড়কটি অন্তত মগের মল্লুক হওয়ার কথা ছিল না। কারণ নতুন বাজার ফুটওভার ব্রিজের নিচেই রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স। সেখানে সবসময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দায়িত্বে থাকেন। সেসময়ও ছিলেন। তবে রাস্তায় নয়, ফুটপাতের দোকানে। দোকানে বসে চা-সিগারেট খাচ্ছিলেন আর গল্পগুজব করছিলেন তারা। সড়কে কী হচ্ছে সেদিকে যেন খেয়াল করারও ইচ্ছে নেই তাদের।

সিয়াবুল ইসলাম সাকিব ঢাকায় এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে। তার সঙ্গে ১৫ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে কথা হয় বাংলানিউজের। সাকিব বলেন, বেশির ভাগ চালককেই দেখা যায় রাস্তায় প্রতিযোগিতা করে পাশাপাশি গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলতে। মাঝে মাঝে দেখা যায়, পাশাপাশি তিন-চারটি বাস আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলার কারণে পেছনে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ নিয়ে তাদের কোনোই ভাবনা নেই।
 
এমন চিত্র কেবল শাহবাগ বা নতুন বাজারেরই নয়, পুরো ঢাকা শহরের। মতিঝিল, গুলিস্তান, রামপুরা, মালিবাগ, নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, আসাদ গেট, মহাখালীসহ নগরীজুড়ে এই ভোগান্তিতে পড়তে হয় জনসাধারণকে।

এই অচল‍াবস্থা নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় কোথাও কোথাও এক-আধটু ব্যতিক্রম দেখা যায়, তবে সেটা সিগনাল নিয়ন্ত্রণ পর্যন্তই। সড়কের ওপর এলোপাতাড়ি গাড়ি পার্কিং বা যাত্রী ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণে তাদের কার্যকর ভূমিকা খুব কমই চোখে পড়ে।

২০১৪ সালে পরিবেশ আন্দোলন বাংলাদেশের (পবা) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানীর সড়কে যানজটে প্রতিদিন প্রায় ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। টাকার অংকে এতে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

যানজট প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের তুলনায় যানবাহনের আধিক্য। এছাড়াও রয়েছে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠা-নামা করানো।

তিনি বলেন, স্টপেজ থাকতেও যাত্রীরা যেমন সড়কে যেকোনো স্থানে বাস থামিয়ে ওঠেন, তেমনি বাসগুলোও যাত্রী দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়ে। এই সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি সবার সচেতনতা জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
এইচআর/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।