রাজশাহী: ‘আমরা দু’জন দুইজনকে ভালোবাসি। আমাদের এই সম্পর্ক বাবা-মা মেনে না নেওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম।
প্রেমিক যুগলের মরদেহের সঙ্গে এমনই একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে মহানগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ। থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মাহমুদুর রহমান বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই থেকে প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা ওই প্রেমিক যুগল আত্মহত্যা করেছেন।
মহানগরীর রাজপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মাহমুদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চণ্ডিপুর কদমতলা এলাকার মোশারফ হোসেন মুসার বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া থাকতো ওই প্রেমিক যুগল। এর মধ্যে আত্মহননকারী শারমিন খাতুনের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার দামকুড়া শিতলাই এলাকায়। তিনি রাজশাহী ডায়াবেটিকস অ্যাসোসিয়েশন নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
অপরদিকে, প্রেমিক আবদুল মোমিনের বাড়ি পাশ্ববর্তী নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার চকরধিনাথ গ্রামে। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল নার্সিং কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান জানান, গত তিন মাস আগে মোশাররফে হোসেনের ওই বাড়ি ভাড়া নেন তারা। মরদেহ দেখে অনুমান করা হচ্ছে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) রাতে তারা আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় শারমিনের মরদেহ জানালার গ্রিলের সঙ্গে এবং ফ্যান ঝোলানো হুঁকের সঙ্গে মোমিনের মরদেহ ঝুলছিল। পরে দুপুরে ওই কক্ষ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ওই এলাকার অধিবাসী শফিক উদ্দিন জানান, শনিবার সকাল পেরিয়ে গেলেও তাদের ঘরের দরজা বন্ধ থাকতে দেখা যায়। পরে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে স্থানীয়রা ঘরের পেছনের জানালা দিয়ে দেখতে পান, ফ্যান ঝোলানো হুঁকে মোমিনের মরদেহ এবং শারমিনের মরদেহ গ্রিলের সঙ্গে ঝুলছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মহানগরীর রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুইজন গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া যাওয়ায় ওই প্রেমিক যুগল ‘ডিপ্রেশন ডিজ-অর্ডার’ অর্থাৎ বিষণ্নতা রোগ থেকে সুচিন্তিতভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে মনে করছেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক বিভাগের প্রধান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মামুন হোসাইন।
ঘটনার পর বিষয়টি জানতে প্রশ্ন করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, তরুণ-তরণীরা অভিভাবক বা অন্য কারো আদেশ-নিষেধ, উপদেশ, পরামর্শ বা মত শুনতে চায় না। পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হতে বা যুক্ত থাকতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নীতি-নৈতিকতার কথা তাদের কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং বিষণ্নতা রোগে ভোগে তারা। আক্রান্তরা তখন কোনো কিছুর পরিণাম ভাবে না।
এ সময় সুচিন্তিতভাবে এমন আত্মহননের পথ বেছে নেয়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান ডিপ্রেশেন ডিজ-অর্ডার বলে। আগে কাউন্সিলিং করা গেলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে মত দেন এই বিশেষজ্ঞ।
** রাজশাহীতে প্রেমিক যুগলের মরদেহ উদ্ধার
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
এসএস/পিসি