ধুনট (বগুড়া): বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কূল উপচে যেন লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে এ কারণে নির্মাণ করা হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এই বাঁধের দৈর্ঘ্য সাত কিলোমিটার।
উত্তাল পানির স্রোতে ভাঙন দেখা দেয় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। উজানের পানির গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ভাঙনের আগ্রাসন থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় নির্মাণ করা হয় দু’টি স্পার।
কিন্ত যমুনা নদীর বুকে নির্মিত স্পার দু’টির শেষ রক্ষা হচ্ছে না। দফায় দফায় ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এগুলো। অস্তিত্ব হারিয়ে বর্তমানে স্পার দু’টি যমুনার অথৈ জলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
এদিকে, স্পার দু’টি টিকে না থাকায় পানির প্রবল স্রোত আঘাত হানছে যমুনা নদীর পাড়ে। এতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ভাঙনের ক্ষত চিহ্ন নিয়ে যমুনা নদীর কূলে দাঁড়িয়ে আছে স্পার ও বাঁধ।
স্থানীয়রা বাংলানিউজকে জানান, ধুনট উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে বহমান যমুনা নদী। এই নদীর তীরে শহরাবাড়ি গ্রাম থেকে মাধবডাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত সাত কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আশির দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অর্থায়নে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
দফায় দফায় ভাঙনের ফলে নদী ধেয়ে আসতে থাকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দিকে। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয় ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো। অধিকাংশ স্থানে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় ২০০২ সালে নির্মাণ করা হয় শহরাবাড়ি ও তার তিন কিলোমিটার ভাটিতে বানিয়াজান স্পার। স্পার দু’টি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে যমুনা নদী বক্ষের দিকে প্রতিটি স্পারের দৈর্ঘ্য এক হাজার ২০০ মিটার। এর মধ্যে এক হাজার ৫০ মিটার মাটির তৈরি স্যাংক এবং স্যাংকের অগ্রভাগে কংক্রিটের তৈরি ১৫০ মিটার ট্রাকচার।
নির্মাণের পর থেকেই দু’টি স্পারে ভাঙন দেখা দেয়। পানির স্রোতে কখনও ধসে পড়ছে স্পারের স্যাংক, আবার কখনও ট্রাকচার ভেঙে বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। স্পার টিকিয়ে রাখতে পাউবো প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে। কিন্ত শেষ পর্যন্ত স্পারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও হাল ছাড়ছে না পাউবো। বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ক্ষতিগ্রস্ত স্পার মেরামত অব্যাহত রেখেছে।
ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল বাংলানিউজকে জানান, যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্পার নির্মাণ করা হয়েছিল, সেই সুফল শেষ পর্যন্ত পায়নি ভাঙন জনপদের মানুষ। দু’টি স্পার এখন বিলীনের পথে। এর মধ্যে শহড়াবাড়ি স্পারের ৩০০ মিটার এবং বানিয়াজান স্পারের এক হাজার মিটার অংশ টিকে আছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে কোনো কাজে আসছে না স্পার। বর্তমানে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে শহরাবাড়ি, বানিয়াজান, কৈয়াগাড়ি, বরইতলী, রঘুনাথপুর, ভান্ডারবাড়ি ও পুকুরিয়া গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মোত্তালেব বাংলানিউজকে জানান, যমুনা নদীর ভাঙনরোধে নতুন একটি প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। ওই প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত দু’টি স্পারের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করে টিকে রাখার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
আরএ