ঢাকা: বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় সোমবার শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। রাজধানীসহ সারা দেশের মণ্ডপগুলোতে প্রতিমার সাজসজ্জাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার'-স্লোগান নিয়ে সারা দেশে ২৯ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপে এ পূজা উদ্যাপিত হবে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে তাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করেছেন।
রাজধানীর বারিধারা বসুন্ধরা এলাকায় এবারই প্রথম বৃহৎ পরিসরে প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর আয়োজন করা হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পুজার মূল মণ্ডপ আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে কুড়িল পূর্বাচল লিংক রোডের ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে বসুন্ধরা জি ব্লকে নান্দনিক এই আয়োজন আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে। এখানে দৈর্ঘ্যে ৪০০ ফুট, চওড়ায় ৭০ ফুট ও উচ্চতায় প্রায় ৩৫ ফুট আয়তনের বিশাল এই পূজামণ্ডপে পাঁচ দিনব্যাপী পূজা-অর্চনার পাশাপাশি চলবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পূজামণ্ডপের মূল প্যান্ডেলের বাইরে কৃত্রিম লেকেও মনোরম আলোকসজ্জা করা হয়েছে। পূজামণ্ডপের লেকের ধারেই রয়েছে কাশবন, জলসিঁড়ি, রাজহাঁস সমেত মনোমুগ্ধকর সাজসজ্জা। এক পলক দেখেই মনে হবে যেন কোনো নতুন আনন্দোৎসবের স্থান।
বসুন্ধরা এলাকার এ পূজামণ্ডপের আয়োজন প্রসঙ্গে বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তপন চন্দ্র বণিক বলেন, এত বড় পরিসরে আমাদের পূজা উদ্যাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ বসুন্ধরা পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এ আয়োজনে পুরো সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের কাছে একটি আশীর্বাদের মতো। সর্বজনীন পূজা উৎসব আয়োজনে বসুন্ধরা গ্রুপকে কাছে পেয়ে সবাই অভিভূত। এই বৃহৎ আয়োজন দেখতে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বসুন্ধরায় আসার কর্মসূচি দিয়েছেন। এ লক্ষ্যেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি প্রাণেশ বণিক জানান, আগে তাঁরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সীমানার বাইরে অ্যাপোলো হাসপাতালের কাছে একটি জায়গায় পূজা-অর্চনা করতেন। এবারই বৃহৎ পরিসরে আবাসিক এলাকার ভেতরে বিশাল আয়োজনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। এখানকার ২০০ হিন্দু পরিবার চার দিন বাসাবাড়িতে কোনো রান্না করবে না। পূজামণ্ডপ থেকেই পরিবারগুলোর জন্য খাবার সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া আগত দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন দুই হাজার প্যাকেট প্রসাদেরও ব্যবস্থা রয়েছে। একসঙ্গে ১০ হাজার লোক বসুন্ধরার এই পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব পালনের সুযোগ পাবে বলে জানান তিনি।
সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। যার ফল হচ্ছে রোগ, শোক, হানাহানি-মারামারি বাড়বে। আর দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ, মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
সোমবার দেবীর ষষ্ঠী বিহিতপূজা, সায়ংকালে আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মঙ্গলবার দুর্গাপূজার সপ্তমী ও মহাসপ্তমী বিহিতপূজা। ২১ অক্টোবর মহাষ্টমী, কুমারীপূজা, সন্ধিপূজা। ২২ তারিখ মহানবমী পূজা। সনাতন পঞ্জিকা মতে, এবার ২২ অক্টোবর একই দিনে মহানবমী ও বিজয়া দশমী পড়ায় ওই দিন দর্পণ বিসর্জন হবে।
তবে সারা দেশে ২৩ অক্টোবরই বিজয়া শোভাযাত্রাসহকারে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মহালয়ার দিন থেকেই মূলত শুরু হয় দেবী দুর্গার আগমনধ্বনি।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, গোটা বাঙালিরই সর্বজনীন উৎসব। এই উৎসব সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
জেডএম