মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আড়পাড়া ও জালশুকা গ্রামের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডার মামলার পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি সংগঠন লাল্টু বাহিনীর প্রধান নুরুজ্জামান লাল্টু রয়েছেন।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আসামিদের উপস্থিতিতে মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ টি এম মুছা এ রায় দেন। এ সময় দণ্ডিতরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় একই রায়ে ১৯ জনকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত।
দণ্ডিতরা হলেন- দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী লাল্টু বাহিনীর প্রধান চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে নুরুজ্জামান লাল্টু, গাংনী উপজেলার জালশুকা গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে ইউনুছ আলী মাস্টার, তার ছেলে মারফত আলী, ভাই ইকরামুল হক, ইউসুব আলীর ছেলে মাসুদুর রহমান ও আক্কাছ আলীর ছেলে আবুল কাশেম।
দীর্ঘদিন মামলায় শুনানি শেষে আজ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বিজ্ঞ বিচারক। তবে এই মামলায় শুধু জালশুকা গ্রামের শওকত আলীর ছেলে জালাল উদ্দীনের দায়ের করা মামলার রায় হয়।
আড়পাড়া গ্রামে নিহত আলতাব আলী, একরামুল হক, আমিনুল ইসলাম ও আব্দুস কুদ্দুছ হত্যা মামলার বাদী মহির উদ্দীন আসামিদের সঙ্গে আপোষ মিমাংসা করে নেন। ফলে এ মামলাটি পরবর্তীতে আর শুনানি হয়নি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৯ আগস্ট দিনগত রাতে জালশুকা গ্রামে লাল্টু বাহিনী প্রধান নুরুজ্জামান লাল্টুর নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী প্রবেশ করে শওকত আলী, তার ছেলে হেলাল উদ্দীন ও পার্শ্ববর্তী তারা চাঁদ আলীর ছেলে নুর ইসলামকে পরিবারের লোকজনের সামনে গলা কেটে হত্যার পর তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে।
এরপর সন্ত্রাসীরা আড়পাড়া গ্রামে প্রবেশ করে ওই গ্রামের আলতাব আলী মোল্লা, তার ছেলে একরামুল হক ঠান্টু, আমিনুল ইসলাম ও আব্দুল কুদ্দুছকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করে।
এ ঘটনায় পরের দিন ৩০ আগস্ট জালশুকা গ্রামের শওকত আলীর ছেলে জালাল উদ্দীন এবং আড়পাড়া গ্রামের নিহত আলতাব আলী মোল্লার চাচাত ভাই মহির উদ্দীন বাদী হয়ে বাহিনী প্রধান নুরুজ্জামান লাল্টুকে প্রধান আসামি করে ২৪ জনের নামে গাংনী থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানা পুলিশ পরের বছর ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ৩১ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। মামলায় ৩০ জন সাক্ষী আদালতে তাদের সাক্ষ্য দেন।
মামলায় সরকারি পক্ষের কৌশুলী ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট কাজী শহিদুল হক ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট একেএম শফিকুল আলম।
এদিকে মামলার বাদী জালাল উদ্দীন ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শহিদুল হক তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমরা আদালতের কাছে সুবিচার পাইনি। অতি শিগগিরই মামলা নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবো।
এদিকে, মামলার রায় শেষে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি ইউনুছ আলী মাস্টারের ছেলে বেকসুর খালাস পাওয়া রানা হোসেন ও আমিরুল ইসলাম মামলার বাদী জালাল উদ্দীনকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
মামলার বাদী জালাল উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর খালাস পাওয়া রানা হোসেন ও আমিরুল ইসলাম তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তারা হুমকি দিয়ে বলেছেন, আগে তোর বাবা ও ভাইকে হত্যা করেছি এবার তোর পালা। তুই এবার মরার জন্য তৈরি থাকিস।
জালাল উদ্দীন জানান, তাদের হুমকির ব্যাপারে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫/আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা
এসআই/আরএ