ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাকার সাফাই সাক্ষী

আবেদনের সময় শেষ, আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
আবেদনের সময় শেষ, আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী

ঢাকা: সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী পক্ষে ৮ জন সাফাই সাক্ষী চেয়ে করা আবেদন আমলে নিলে অরাজকতা সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) নিজ কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।



তিনি বলেন, এটি আমলে নিলে প্রতিটি আসামি একের পর এক দরখাস্ত করবে। এছাড়াও এ মামলার বিচারের সময় সাকা চৌধুরী নানান ধরনের তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। আর এগুলো (অর্থাৎ তিনি দেশে ছিলেন না) যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালত বিচার করেছেন। এ কথার পক্ষে এখন কয়েকজনকে সমন চেয়ে একটি দরখাস্ত করেছেন। এটা আদালতে বিচারার্য।
 
তিনি আরো বলেন, ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে রিভিউ’র স্কোপটা খুবই কম। সাধারণত আদালতের কোনো ভুল পরিলক্ষিত হলে পুর্নবিবেচনার সুযোগ থাকে। আর তিনি এ আবেদন করেছেন নির্ধারিত সময়ের পরে। অর্থাৎ রিভিউ করতে সময় হচ্ছে ১৫দিন। কিন্তু সে সময়তো শেষ হয়ে গেছে। এটা তামাদি হয়ে গেছে। এখন এ দরখাস্ত আমলে নিলে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। প্রতিটি আসামি একের পর এক দরখাস্ত করবে।

অপরদিকে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, প্রয়োজনে আপিল বিভাগ সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এসব ব্যক্তিদের সমন দিয়ে এ ব্যাপারে (যুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী পাকিস্তানে ছিলেন) নিশ্চিত হতে পারেন। এতে দিবালোকের হয়ে যাবে সাকা চৌধুরী বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাকা চৌধুরীর সুনির্দিষ্ট ডিফেন্স হচ্ছে তিনি চট্টগ্রামে থাকতেন না। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে থেকে ঢাকার নটরডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে ধানমন্ডির পৈত্রিক বাসায় থাকতেন। এবং ২৯ মার্চ পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকায় আসেন। পাঞ্জাব যাওয়ার সময় কাইউম রেজা চৌধুরী ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিজ গাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন।

খন্দকার মাহবুব বলেন, ইতিমধ্যে দেশি এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এসব রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়- যদি আদালত অনুমতি প্রদান করেন তবে উপরোক্ত ব্যক্তিরা তাদের এফিডেবিট প্রদত্ত বক্তব্যের ব্যাপারে বাংলাদেশে এসে সত্যতা নিশ্চিতের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।   
 
মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পক্ষে রিভিউ শুনানির সময় আটজনকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঁচজন পাকিস্তানের, একজন যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি দু’জন বাংলাদেশি সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিতে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়।

এ আটজন হলেন- পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ মিঞা সুমরো, সাবেক রেলমন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ডন মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারপারসন আম্বার হারুন সাইগাল, স্থপতি মুনিব আরজামান্দ খান ও ভিকারুন্নিসা নুনের নাতি ফিরোজ আহমেদ নুন, ফিজিতে দায়িত্বপালনকারী আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিক, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন এবং বিচারপতি শামীমের মা জিনাত আরা বেগম।  

বিচারপতি শামীম হাসনাইন এর আগে সাক্ষী দেওয়ার অনুমতির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া দেননি প্রধান বিচারপতি।

এর আগে, ১৪ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুর্নবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধী বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী।

তিনি জানান, মোট ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে।

সাকা চৌধুরীর প্রধান আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদনের শুনানিতে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা।

এদিকে, দ্রুত রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য দিন নির্ধারণে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের এ আবেদনের শুনানি হতে পারে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর)।
 
গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদের সঙ্গেই সাকা চৌধুরীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করেন সাকা চৌধুরী।
 
যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
 
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
ইএস/জেডএস

** সাকার পক্ষে ৮ সাফাই সাক্ষীর সুযোগের আবেদন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।