ঢাকা: মারা যাওয়ার সাত বছর পর মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যার বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে তার নাম কামরুল ইসলাম সিদ্দিক।
যিনি প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
মৃত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাকরি থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অবৈধভাবে কম্পিউটার সরবরাহসহ জনবল নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রয়াত এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নতুনভাবে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানের নিয়ম নেই। অভিযোগ চলাকালীন সময়ও যদি কেউ মারা যায় বা দুদকের কোনো মামলার আসামি বা চার্জশিটভুক্ত হলেও তার নাম বাদ দেওয়া হওয়া হয়। প্রয়াত কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের বেলায় ঘটেছে তার উল্টো। মারা যাওয়ার সাত বছর পর নতুনভাবে শুরু হয়েছে অনুসন্ধান। অবশ্য দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, ভুলবশত এমনটা হয়েছে।
জানা যায়, কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, ২০০১ সালে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অভিযোগটি দুদকের অনিষ্পন্ন সেল-১-এর ফাইলবন্দি অবস্থায় ছিল। এরপর চলতি মাসের ৪ অক্টোবর কমিশন থেকে অভিযোগটি নতুন করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক এস এম মফিদুল ইসলামকে।
দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে অনুসন্ধানের বিষয়ে বলেন, এ ঘটনা বিক্ষিপ্ত হলেও এটা দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করবে। অনুসন্ধানে অনুমোদনের আগে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু প্রয়াত এ ব্যক্তি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তার বর্তমান অবস্থান জেনেই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতো।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৫ সালের ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়া শহরে জন্ম নেওয়া কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া জেলা বোর্ডে পূর্ত কর্মসূচি শাখায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছেন। স্বাধীনতার পর খুলনা মিউনিসিপ্যালিটিতে পূর্ত কর্মসূচির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলি হন। ১৯৯২ সালে ব্যুরোর মর্যাদা বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রথম প্রধান প্রকৌশলী নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালের মে পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। ওই বছরের মে মাসে তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন। ২০০০ সালের প্রথম দিকে তিনি পূর্তসচিব ও ২০০১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে যান। ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
এডিএ/বিএস