মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ ও গোলড়া হাইওয়ে থানা পুলিশকে মাসিক চাঁদা দিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবাধে চলছে ফিটনেসবিহীন লেগুনা।
শুধু ফিটনেসবিহীনই নয়, অধিকাংশ লেগুনারই নেই রুট পারমিট, নেই লেগুনা চালকদের বৈধ লাইসেন্স ও ইনস্যুরেন্স।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে সরেজমিন পাওয়া যায় এ সব তথ্যের সত্যতা।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচলকারী লেগুনার দায়িত্বরত সহকারী সুপারভাইজার সাগর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন ওই রুটে কমপক্ষে ২০টি লেগুনা চলাচল করে। এর জন্যে প্রতিটি লেগুনার চালককে জিপি (নিজেদের চাঁদা) দিতে হয় দৈনিক ৮০ টাকা, পার্কিং ফি দিতে হয় ২০ টাকা এবং ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে চাঁদা দেওয়ার জন্যে প্রতি মাসে লেগুনা প্রতি ৩শ’ টাকা করে নেওয়া হয়। জিপি ও পার্কিং চাঁদাগুলো তিনি নিজে আদায় করেন এবং পুলিশের মাসিক চাঁদার টাকাগুলো আদায় করেন লেগুনা চালক সাইফুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে লেগুনার চালক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিটি লেগুনা থেকে ৩শ’ করে টাকা আদায় করার পর ওই টাকা লেগুনা মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট বাশার হোসেন ও গোলড়া হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট মেহেদি হাসানকে দেওয়া হয়।
এছাড়া মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশ থেকে মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুড়ি ও তরা এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২০/২৫টি লেগুনা একই ভাবে চলাচল করছে।
এ বিষয়ে গোলড়া হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মেহেদি হাসান লেগুনা চালকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আগে তিনি নিয়মিত মাসিক চাঁদা নিলেও এখন তিনি কোনো মাসিক চাঁদা নেন না। এখন হাইওয়ে থানার অন্য কোনো কর্মকর্তা ওই মাসিক চাঁদার সঙ্গে জড়িত।
এছাড়া কয়েকদিন আগেই তিনি ভৈরবে বদলি হয়েছেন বলেও জানান। কিন্তু মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট বাশার মাসিক চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড লেগনা মালিক সমিতির সভাপতি রানা সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গোলড়া হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকার ধামরাই উপজেলার কালামপুর থেকে মানিকগঞ্জের শিবালয় পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে ৪২৮টি মামলা দেওয়া হয়। যার মধ্যে ফিটনেসবিহীন মামলা ২৫টি। আগস্ট মাসে মামলা দেওয়া হয় ১২৫৯টি। যার মধ্যে ফিটনেসবিহীন ১২৫টি। সেপ্টেম্বরে মামলা হয় ৬৩৫টি। যার মধ্যে ফিটনেসবিহীন মামলার সংখ্যা ৩৩টি। তবে ফিটনেসবিহীন লেগুনায় কতগুলো মামলা দেওয়া হয়েছে তার পৃথক তালিকা নেই হাইওয়ে পুলিশের কাছে।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুল হক বাংলানিউজকে জানান, প্রায় বেশির ভাগ লেগুনার ফিটনেস, রুট পারমিট, ইনস্যুরেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই বিষয়টি সত্য। তবে মাসিক চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
মহাসড়কে থ্রী হুইলার নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই লেগুনার দিকে ঝুঁকে পড়ছে থ্রী হুইলার চালকরা। অতিসত্বর মহাসড়কে ওই লেগুনার চলাচল বন্ধ না করা হলে আবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে ধারণা করছেন নিয়মিত যাত্রী, বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
আরএ