ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

৩০ বছরেও হয়নি ব্রিজের পাটাতন

সোলায়মান হাজারী ডালিম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
৩০ বছরেও হয়নি ব্রিজের পাটাতন

ফেনী: তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজটি। কাঠামো থাকলেও পাটাতন নেই।

  তাই দুই পাড়ের মানুষের নদী পার হওয়ার ভরসা এখনো নৌকাই। পাটাতনহীন অবকাঠামোর ব্রিজটি কোনো কাজেই আসছে না।
 
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের শেষ মাথায় মুহুরী নদীর হাজির ভাগনা এলাকায় এই ব্রিজের অবস্থান।  
   
উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের সঙ্গে ফুলগাজীর মুন্সীরহাট ইউনিয়ন, দরবারপুর ইউনিয়ন, জিএমহাট ইউনিয়ন, ফুলগাজী উপজেলা ও জেলা শহর ফেনীর সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হল আমজাদহাট- ইসলামিয়া বাজার- ঘাটঘর-মুন্সীরহাট। এভাবে রাস্তাটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে মিলেছে।
 
মুহুরী নদীর পূর্বাঞ্চল আমজাদ হাট ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এ পথে চলাচল করে। এছাড়া ব্রিজটির পূর্বাঞ্চলে রয়েছে আলহাজ ডিগ্রি কলেজ, ধর্মপুর এডুকেশনাল স্টেট ও দেবপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা। পশ্চিমে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ঘাটঘর মাদ্রাসা। ব্রিজটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসী ও হাজারো শিক্ষার্থী পারাপারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  
 
স্থানীয় আমজাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মওলানা ইব্রাহিম জানান, এখানকার লোকজন এবং ফেনীতে পড়ালেখা করে এমন শিক্ষার্থীর বিকল্প পথ আমজাদহাট- চাঁদগাজী-ছাগলনাইয়া হয়ে প্রায় ২২/২৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অথবা আমজাদহাট-মনিপুর-জগৎপুর-মুন্সীরহাট হয়ে প্রায় ২০/২১ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে যেতে হয়। এতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। খরচও পড়ে বেশি। কিন্তু আমজাদ হাট-ইসলামিয়া বাজার-ঘাটঘর হয়ে ফেনী যেতে সময় ও খরচ লাগবে অর্ধেকেও কম।
 
সরজমিনে দেখা যায়, হাজীর ভাগনা স্থানে দুটো নৌকায় পারাপার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অথচ ব্রিজ আছে। নৌকার মাঝি ফজলুল হক বলেন, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই ব্রিজটিকে দেখছি।

ব্রিজটি নির্মাণের সময় তিনি শ্রমিকের কাজও করেন বলে জানান।
 
রফিক নামে এক কলেজছাত্র বাংলানিউজকে বলেন, জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার যাতায়াতের প্রায় সব রাস্তায় পুল, কালভার্ট নির্মিত হলেও হাজীর ভাগনা ব্রিজ নির্মাণের অভাবে এ অঞ্চলের লোকজনের দুর্দশার শেষ নেই।
 
কথা হয় পূর্ব দেবপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রী সালমার সঙ্গে। সে দক্ষিণ ধর্মপুর নদীর কূলের বাসিন্দা। সালমা জানায়, এখানে সব সময় নৌকা থাকে না। তাছাড়া, শুষ্ক মৌসুমে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকলে তখন খেতের আইল ধরে মাঠ ঘুরে স্কুল যেতে হয়। একই গ্রামে স্কুল থাকার পরও শুধু ব্রিজটির কারণে এলাকার বহু শিক্ষার্থীকে অন্য স্কুলে পড়তে হয়।
 
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৯-৮০ সালে লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীরবিক্রম যোগাযোগ মন্ত্রী থাকাকালে ব্রিজটি নির্মিত হয়। তখন ব্রিজটিতে কাঠের পাটাতন লাগানো হয়। পরে, বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে কাঠের পাটাতন ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। ২০০১-২০০৫ পর্যন্ত সময়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বারবার তাগাদা সত্ত্বেও ও ব্রিজটি পুনর্নির্মাণ হয়নি।  
 
এতে তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিলে ব্রিজের উপর বাঁশের পাটাতন লাগনো হয়। এতে করে ওই অঞ্চলের লোকজনের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়। কিন্তু কয়েক বছর পর সেই বাঁশের পাটাতন নষ্ট হয়ে গেলে স্বরূপে ফেরে ব্রিজটি।
 
ব্রিজটি নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলাইয়া) আসনের সংসদ সদস্য শিরিনা আখতার বাংলানিউজকে জানান, ব্রিজটির নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিগগিরই ব্রিজটির কাজ শুরু হবে।  
 
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুতই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হোক। এতে চলাচলে তাদের দুর্ভোগ কমবে। একই সঙ্গে পড়ে থাকা একটি অবকাঠামো মানুষের কাজে ব্যবহৃত হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫ 
এমজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।