সাভার (ঢাকা): ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে আমিনবাজার ঢাকা শহরের অত্যন্ত নিকটতম আবাসিক এলাকা। এর বুক চিরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক।
কিন্তু বসতবাড়ীর ও কৃষি জমির মাঝে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে তোলা একটি কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে বর্তমানে এই এলাকার জনজীবন বিপন্ন প্রায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আমিন বাজারের সালেহপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ব্লুজোম ক্রুড অ্যান্ড ফানিস অয়েল নামের টায়ার পুড়িয়ে তেল তৈরির একটি কারখানা। কারখানাটির মালিকের নাম ছদরুল ইসলাম।
এই কারখানাটির চারিদিকে মানিক নগর, ধোবারই, দেওয়ানবাড়ী, সালেহপুর, বড়দেশী, বারইপারা গ্রামের হাজারো অধিবাসীর বসবাস।
কারখানাটি একবার চালু করলে আশপাশের বাতাসে কয়েকদিন পর্যন্ত থাকে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাব। এ সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এলাকাবাসীর।
ইতোমধ্যেই শিশু সহ স্থানীয় অনেকেরই শ্বাসকষ্টসহ নানা চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে।
এছাড়া কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পাশের নদীতে। এলাকার সাধারণ মানুষ নানাভাবে প্রতিবাদ জানালেও প্রভাবশালী হওয়ায় সে ব্যাপারে কর্ণপাত করছেন না মালিক পক্ষ।
জিয়াউর রহমান নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, এই কারখানাটির কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এখানে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।
মতিন নামের স্থানীয় একজন বাংলানিউজকে বলেন, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস করে ওই কারখানায় পুরোদমে চলছে টায়ার পুড়িয়ে তেল তৈরির কাজ। বাধা দিতে গেলে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে মোবাইলে ফোন করা হয়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আব্দুল আহাদ বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, লোকালয়ে অবস্থিত হওয়ায় কারখানার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী ফসলের ক্ষেতে ও জনজীবন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারখানার কর্মরত শ্রমিকরাও ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি ধোঁয়ার কারণে মসজিদে নামাজও পরা যায় না। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও কারখানার কাজে শিশুদেরকেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তাকিবের কাছে প্রতিষ্ঠানটির বৈধ কাগজপত্রের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, কারখানার কোন কাগজপত্র নাই। বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (চর্ম ও যৌন) ডা. মো. রোকন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের শরীরের চামড়া শুষ্ক আমিষ দিয়ে তৈরি যা এই বিষাক্ত গ্যাসের ফলে নষ্ট হয়ে যায়। শরীরের চামড়া মোটা হয়ে যায় এবং কালো হয়ে সেখানে ঘা’য়ের সৃষ্টি হয়। এ জাতীয় পদার্থ এসিডের মতোই ভয়াবহ,যা ধীরে ধীরে মানুষের শরীরকে পুড়িয়ে ফেলে।
এই পরিবেশে কোন মানুষ বেশি দিন থাকলে তার কিডনি সমস্যা, টনিক ব্রংকাইটিস ও লাংসে সমস্যা হতে পারে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে স্কিন ক্যান্সারও হতে পারে।
বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। অনুসন্ধান সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ সম্পর্কে পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো.আব্দুল হাই কারখানাটি সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কারখানাটি পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা গেছে, এটি কোন ভাবেই ছাড়পত্র পাওয়ার যোগ্য নয়। এটি পরিবেশের ক্ষতি করছে। খুব শিগগিরই বন্ধের নোটিশ প্রদান করা হবে।
মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ছদরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে উপস্থিত সাংবাদিক ও এলাকাবাসীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়া হয়।
এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে প্রশাসন,পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
আরআই