ঢাকা: প্রায় প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রেই মৃত্যুর পর স্বজনহারা কষ্টে মুষড়ে পড়েন পরিবার-পরিজন, শুভানুধ্যায়ীরা। চোখের জলে ভেসে তার শেষ বিদায়ের প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয় যেন নিরবেই।
রোববার (২৫ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ বনশ্রীতে ১২২ নং সড়কের একটি বাড়ির বাসিন্দা ছবি বেগম (৭০)। দ্রুত নেওয়া হয় বনশ্রীর ফরাজি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক জানালেন, ছবি বেগম আর নেই।
এরপরই আসলে ঘটনার শুরু। স্বাভাবিকভাবেই ছেলেরা ছবি বেগমের দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মেয়ে চন্দনা রানী রায় দাবি করে বসলেন, মায়ের সৎকার হবে হিন্দু ধর্মমতে।
মায়ের সৎকার প্রশ্নে একটা পর্যায়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সন্তানরা। খবর পেয়ে পুলিশ আসে, সমাধানে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। সে মোতাবেক ছবি বেগমের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মরচুয়ারির হিমঘরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
ছবি বেগমের ছেলে শাহাবুদ্দিন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমরা দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু বোন চন্দনা রানী রায় (বিবাহিতা) দাবি করেন, মায়ের সৎকার হবে হিন্দু প্রথানুসারে।
এ ব্যাপারে চন্দনা রানী রায় দাবি করেন, তার মায়ের নাম ছবি রানী সাহা। কাজেই তার সৎকার হবে হিন্দু ধর্মমতে।
শাহাবুদ্দিনের কথাতেই সমস্যার মূল কারণটা জানা গেল। তার বাবা হীরা লাল সাহা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বছর কয়েক আগে তার মৃত্যু হলে হিন্দু ধর্মমতেই তাকে সৎকার করা হয়।
দ্বন্দ্ব চরমে উঠলে খবর পেয়ে রোববার দুপুর ২টার দিকে ছবি বেগম বা ছবি রানী সাহার বাসায় পুলিশ আসে। সমস্যা সমাধানে ভোটার আইডি কার্ড পরীক্ষা করা হয়। সেখানেও তার নাম ‘ছবি বেগম’ই পাওয়া যায়। কিন্তু মেয়ের দাবিও ফেলে দিতে পারে না পুলিশ। শেষ পর্যন্ত মরদেহ ঢামেক মরচুয়ারির হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়ে আদালতেই এর মীমাংসার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল হোসেন বলেন, সন্তানদের দাবি একেকরকম হওয়ায় আগামীকাল (সোমবার, ২৬ অক্টোবর) আদালতে আবেদন করা হবে। আদালতই বিষয়টির নিষ্পত্তি করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৫
এজেডএস/আরএইচ
** ‘বাবা মরার পর এতিম হই নাই, আজ হইলাম’