সিলেট: শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আগামী ৮ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ২টা ১৫ মিনিটে এ মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২টায় মামলার ১১ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। অন্যদিকে রাজন হত্যা মামলার রায়ের দিন শোনার অপেক্ষায় সকাল থেকেই আদালতের বাইরে ছিলেন হাজারো মানুষ।
১ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১৪ কার্যদিবসে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর মধ্যে রোববার (২৫ অক্টোবর) থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন কার্যদিবসে শেষ হয় ১৩ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন।
আদালত থেকে বের হয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মফুর আলী সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটের জনগণ, আইনজীবী এমনকি আইন, দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রত্যেকটি মহলে একটাই আওয়াজ, শিশু রাজন হত্যা মামলার ন্যায়বিচার হোক। আমরাও শতভাগ আশাবাদী এ মামলার রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি হবে।
তিনি বলেন, আদালতে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও তাদের পক্ষে কোনো যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি তাদের আইনজীবীরা। সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, নির্মমভাবে নির্যাতন করে শিশু সামিউল আলম রাজনকে হত্যা করা হয়েছে। সে হত্যা মামলার চার্জশিটে ৩৮ জন সাক্ষী ছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। চার্জশিটভুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে ৮ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালতে যুক্তিতর্ক শেষে ৮ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের রায়ে সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কামরুলের আইনজীবী আলী হায়দার ফারুক বলেন, ঘটনার দিন সকালে রাজন টুকেরবাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়েছিলো, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। রমজান মাসে সকালে কোনো বাজার বসে না। কামরুলকে মারপিট করতেও কেউ দেখেননি। কে কোন জায়গায় আঘাত করেছেন, তাও সাক্ষীদের কেউ বলেননি। সুন্দরভাবে যুক্তিতর্ক শেষ করতে পারার দাবি জানিয়ে আসামিরা খালাস পাবার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
আসামিপক্ষের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বলেন, রাজন হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। আমরা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, আমাদের আসামিরা নিরাপরাধ। তাই আসামিরা খালাস পাবেন বলেও আশাবাদী আমি।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। নিহত রাজন সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের আজিজুল ইসলাম আলমের ছেলে।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহ গুম করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হন কামরুলের ভাই মুহিত আলম। নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে জনতা।
হত্যাকাণ্ডের পর মহানগরীর জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মুহিত আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার অভিযোগে বরখাস্ত হন জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।
গত ১৬ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামসহ ১৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদার। এর আগে মুহিত আলমসহ আটজন এ ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর একই আদালতের বিচারক চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় চার্জ গঠন করেন। ১ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ কার্যদিবসে মোট ৩৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। এরপর কামরুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ অক্টোবর ১১ জন সাক্ষী ফের সাক্ষ্য দেন তার উপস্থিতিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৫
এনইউ/এএসআর
** রাজন হত্যা মামলার রায় ৮ নভেম্বর