ঢাকা: শিশুটির বয়স মাত্র সাড়ে ১৩ মাস। কিন্তু মাথা অনেকখানি বড়।
বাবা-মা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। বড় মাথার শিশুটিকে ঢামেকে নেওয়া হলে জমে যায় ভিড়। যেন কমারই নাম নেই। এক ঝলক দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন উৎসুক মানুষজন। অন্যদিতে কেউ কেউ মায়া দেখিয়ে করেন সহযোগিতা, সাহায্য হিসেবে দেন পাঁচ-দশ কিংবা বিশ-ত্রিশ টাকা।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানে শিশু তৌহিদ হাসানকে নিয়ে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকেই বসে ছিলেন মা আকলিমা খাতুন। হ্যাঁ, বড় মাথার এই শিশুটির নাম তৌহিদ। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে আনা হলেও এখানকার চিকিৎসকরা পাঠিয়ে দিলেন অন্যখানে। এ নিয়ে বিপাকে মা আকলিমা ও বাবা আব্দুল মজিদ হাওলাদার।
বাবা আব্দুল মজিদ হাওলাদার বাংলানিউজকে জানান, তিন সন্তানের মধ্যে শিশু তৌহিদ হাসান সবার ছোট। জন্মের পর বেশ ভালোই ছিল সে। তবে ১১ দিনের মাথায় গিয়ে হঠাৎ বদলাতে থাকে ওর মাথার আকার। তখন খুব খিঁচুনি উঠতো। খিঁচুনি যতোই বাড়তে থাকে ততই বাড়ে মাথা!
আব্দুল মজিদ আরও জানান, চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা সদর হাসপাতাল ও জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে ঘুরেছেন বহু দিন। করা হয়েছে সিটি স্ক্যান, হয়েছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। কিন্তু ধরা পড়েনি কিছুই। এদিকে দিন যতো গড়াতে থাকে মাথাও ততই বাড়ে।
তার সন্তান আসলেই সুস্থ জীবনে ফিরে আসবে এমন আশা নিয়ে এসেছেন ঢাকায়। সোমবার (২৬ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ভর্তি করান ঢামেকের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে। কিন্তু মাত্র একদিন চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন, অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তাই তো মঙ্গলবার ছাড়পত্র সংগ্রহ করে যেতে হচ্ছে শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে (জাতীয় স্নায়ুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল)।
পেশায় কৃষক আব্দুল মজিদ হাওলাদার এতো টাকা পাবেন কোথায়? এর উত্তরে বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনেকেই সাহায্য হিসেবে টাকা দিয়েছেন। যা দিয়ে নিউরোসায়েন্সে প্রাথমিকভাবে কাজ চালিয়ে নেবো। বাকিটা সেখানে গিয়ে দেখি কী হয়। সবাই বলে শারীরিক প্রতিবন্ধী, বড় মাথার শিশু। আমি তা বলি না, এখন শুধু একটাই চিন্তা ওর চিকিৎসা হবে কি...।
তিনি সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতেও আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এহসান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সমস্যাটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে- শরীরে পানি যখন অতিক্রম করতে পারে না, টিউমার ও জন্মগত কারণ অন্যতম। তবে ভালো চিকিৎসা দেওয়া গেলে শিশুটিকে সুস্থ করা করে তোলা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৫
এজেডএস/আইকে /আইএ