ঢাকা: প্রতিদিন ২৭৫ টাকা কিস্তিতে ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধের সময় বেঁধে দিয়ে বস্তির বাসিন্দাদের দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক-ইন সেন্টারে ‘নগর দরিদ্রের জন্য আবাসন: সমস্যা, সম্ভাবনা এবং নীতি করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব তথ্য জানান তিনি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আরবান ফোরাম, ইউএনডিপি এবং রিহ্যাব এ সেমিনারের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, বস্তিবাসীর জন্য মিরপুরে একটি জায়গার মধ্যে সাড়ে চারশ’ স্কয়ারফিটের দুই বেড রুমের দুই হাজার অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে তোলা হবে। এর সঙ্গে বাথরুম, রান্নাঘর ও বেসিনের ব্যবস্থা থাকবে। অ্যাপার্টমেন্টগুলো আগেই বরাদ্দ দেওয়া হবে না। তৈরি করে সেখানে বস্তিবাসীদের তুলে দেওয়ার পর বলা হবে, দিনে ২৭৫ টাকা করে দিতে হবে। ২০ বছর পর এ অ্যাপার্টমেন্ট তার হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্যও কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তাদের জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেখানে দীর্ঘ মেয়াদে অ্যাপার্টমেন্টের দাম পরিশোধ করার সুযোগ পাওয়া যাবে।
আবাসিক এলাকায় বস্তি থাকার জন্য ওই এলাকার নাগরিকরাও দায়ী মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, যারা বড় বড় বাড়ি করেছেন তারা কিন্তু গৃহকর্মীদের জন্য থাকার কোনো ব্যবস্থা করেন না। ফলে তাদের বাড়ির আশে-পাশেই যেন এসব গৃহকর্মীরা থাকতে পারেন, সে কারণে তারাই চান না বস্তি উঠে যাক।
বস্তিবাসীর কাছ থেকে যেসব টাকা নেওয়া হয় সেগুলো ওই এলাকার মাস্তান ও নিয়ন্ত্রণকারীদের হাতেই থাকে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা সঠিকভাবে নগর পরিকল্পনা করি না। আবাসিক এলাকায় গড়ে তুলছি রেস্টুরেন্ট, হোটেল। তাই পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বস্তিবাসীর সঠিক পুর্নাবাসনের পাশাপাশি কড়াইল বস্তিতে আইসিটি পার্ক, প্রতিটি উপজেলায় আবাসিক এলাকা গড়ে তোলাসহ নানা পরিকল্পনার কথাও জানান গৃহায়নমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নগরায়ন গড়ে তুলতে হবে। সারাদেশই যেন শহর হয়, সে পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
সেমিনারে শুরুতে ‘হাউজিং ফর দ্য আরবান পুওর সিসিওয়েশন অ্যান্ড পলিসি পার্সপেক্টিভস’ শীর্ষক কি-নোট উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী বিভাগের প্রফেসর ড. মো. শহিদুল আমিন।
বস্তিবাসীর সংখ্যা নির্ণয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ড. মো. শহিদুল আমিন বলেন, ২০০৫ সালে বস্তিবাসীর সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ। কিন্তু ২০১৪ সালে এর সংখ্যা বলা হচ্ছে ২২ লাখ। এ কয়েক বছরে বস্তিবাসীর সংখ্যা এতো কমে যাওয়ার কথা নয়।
তিনি জানান, আইনে আছে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা যাবে না। যতোদিন পুনর্বাসন করা না যাবে, ততোদিন তাদের মৌলিক সেবা দিতে হবে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে বস্তি গড়ে ওঠায় তারা বিভিন্ন সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
সেমিনারের প্রথম পর্বে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মাদ মঈনুদ্দিন আব্দুল্লাহ’র সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ইউএনডিপি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর পাওলিন টামিসিস। দ্বিতীয় পর্বে ‘ল’ ইনকাম হাউজিং ডেলিভারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং’ শীর্ষক কি-নোট উপস্থাপন করা হয়। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন আসকের চেয়ারপার্সন ড. হামিদা হোসাইন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
একে/এএসআর