ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অটোরিকশা মিটারে চলে না, মিটারে চলে!

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৫
অটোরিকশা মিটারে চলে না, মিটারে চলে! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সরকারি নির্দেশনা অনুসারে রাজধানীতে সিএনজি চালিত অধিকাংশ অটোরিকশা মিটারে চলছে না। আবার ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু অটোরিকশা মিটারে চলছে।

মিটারে না চলার জন্য চালক ও যাত্রীরা একে-অপরকে দায়ী করছেন।
 
চালকরা বলছেন, ভাড়া ও ওয়েটিং চার্জ বাড়ানোর কারণে যাত্রীরাই মিটারে যেতে রাজি না। যানজটে নেমে পড়ছেন তারা। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, চালকরা ভাড়া নিয়ে আগের মতোই স্বেচ্ছাচারিতা করছেন। এলাকা পছন্দ হলে তারা মিটারে যেতে রাজি হন, না হলে মিটারে যেতে চান না।
 
রোববার (০১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে বহু যাত্রী ও অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
এ সময় দেখা যায়, সড়কে চলাচল করা বহু অটোরিকশায় মিটার ক্যালিবারেশন করা নেই। আবার মিটার থাকলেও তা না মেনে  যাত্রী বহন করছেন অনেকে। চালকরা নির্দেশনা মানছেন কি-না সে বিষয়ে অটোরিকশা মনিটরিংয়ের জন্য ওই সব এলাকায় দায়িত্বরত কারো দেখা মেলেনি।
 
তবে কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে অনেকেই মিটারে চলাচলের নতুন নিয়মের কথা জানেন না। আর যারা জানেন তারা বলছেন, অটোচালকরা নিজেদের ইচ্ছামতো যাত্রী বহন করছেন। মিটারে যাওয়ার জন্য বললে যাত্রী বহনে রাজি হন না তারা।
 
রামপুরা থেকে মিরপুর যেতে সিএনজি চালিত অটোরিকশার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আসফাক আহমেদ। তিনি বলেন, সড়কে ২০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি, মিটারে কোনো অটোই যেতে চায় না।   চালকদের কেউ বলেন, মিটার লাগানো হয়নি। আবার কেউ বলেন, ওই এলাকায় যাবেন না।
 
আসফাকের মতো একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মধ্য বাড্ডায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রী জাফর উল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, উপায় না দেখে খিলগাঁও থেকে তিনি ১২০ টাকা ভাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন।  
 
মহাখালী ফ্লাইওভারের পাশে এক যাত্রী ও অটোচালকের মধ্যে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি করতে দেখা যায়। যাত্রী সুফিয়া আক্তার বলেন, ড্রাইভার মিটারে যেতে চান না। তার নামে মামলা হওয়া উচিত। একই সময় আরেক যাত্রীকেও সেই চালকের সঙ্গে মিটারে যাওয়া নয়, ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করতে দেখা যায়।
 
পরে সাংবাদিক পরিচয়ে সেই অটোরিকশা চালক সুলতান আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি বলেন, আপনি মিটারে যদি যেতে চান, তাহলে যেতে পারবেন, ওঠেন।
 
অন্যান্য যাত্রীদের নিয়ে না যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সকালে মতিঝিল থেকে মিরপুর, আবার মিরপুর থেকে মহাখালী দু’টি ট্রিপ দিয়েছি। সে সময় মিটারে যাত্রী বহন করেছি। কিন্তু যানজটে পড়লে যাত্রীরা নেমে পড়েন।
 
ওয়েটিং চার্জ বাড়িয়ে প্রতি মিনিটে দুই টাকা করার কারণে যাত্রীরা পথে নেমে পড়েন বলে তিনি যুক্তি দেন। আবার তিনি অভিযোগ করেন, মালিককে গাড়ির জমার পরিমাণ ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ার কারণেও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
 
আরেক চালক মোসলেম উদ্দিন জানান, যাত্রীরাই মিটারে যেতে চান না। ভাড়া বৃদ্ধি ও ওয়েটিং চার্জ বাড়ানোর কারণে যাত্রীরা মিটারে না গিয়ে দর কষাকষির মাধ্যমে যেতে বেশি পছন্দ করছেন।
 
তবে মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায়  সিলেট থেকে আসা মঈনুল হোসেন নামে এক যাত্রীর অভিযোগ, মিরপুর যেতে এ পযন্ত ৫/৬টি অটোরিকশাকে মিটারে যাওয়ার জন্য বললেও চালকদের কেউ যেতে রাজি হননি।
 
গত ১০ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ’র এক সুপারিশের ভিত্তিতে বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানো হয়। এতে অটোরিকশা মিটারে চলতে প্রথম দুই কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ টাকা। আর মালিকের জমার পরিমাণ ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০০ টাকা। সিএনজি চালিত অটোরিকশার নতুন এ ভাড়া মূ্ল্য রোববার (১ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হচ্ছে।
 
ওই দিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সিএনজি চালিত অটোরিকশার মিটারের বিষয়টি স্ট্রিক্টলি ফলো করা হবে। অটোরিকশা চালুর আগে মিটার ক্যালিবারেশন করে নিতে হবে, না হলে চলতে পারবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
টিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।