ঢাকা: গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল স্মারকলিপি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে রওয়ানা দিয়েছেন।
দলের অন্য চার সদস্য হলেন- সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিলানী শুভ, উদীচীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী জীবনানন্দ দত্ত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে মঞ্চের প্রতীকী কফিন মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়লে একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এর আগে প্রেসক্লাব পার হয়ে সচিবালয়ে ঢোকার রাস্তার মুখে তিন স্তরের ব্যারিকেড দিয়ে মিছিলটি আটকে দেয় পুলিশ।
প্রকাশক, লেখক, ব্লগারসহ একের পর এক মানুষ হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ থেকে বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) এ কফিন মিছিল বের করে গণজাগরণ মঞ্চ। মিছিলে ৬ ব্লগার হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে ৬টি প্রতীকী কফিন এবং পরবর্তী টার্গেট কে- লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করছেন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অসংখ্য সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছেন মিছিলে।
স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার আগে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, এ হামলা শুধু মুক্তমনা মানুষ ও ব্লগারদের বিরুদ্ধে নয়, এ হামলা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, আজকে জঙ্গিবাদ অপশক্তি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেই যুদ্ধ গোটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে কোনো আইন-শৃঙ্খলা সদস্যকেও ছাড় দেবে না তারা। তাই আজ কোনো বিভাজন নয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ শিক্ষক, ছাত্র, নারী পুরুষ, আদিবাসী বাঙালিকে এক কাতারে দাঁড়ানো দরকার। আজকের এ প্রতিরোধে সবাইকে শামিল হওয়া দরকার।
রাজনীতিবিদ ও প্রশসনের মাঝে জঙ্গিবাদের ভূত প্রবেশ করেছে মন্তব্য করে ইমরান বলেন, এই ভূত আগে তাড়াতে হবে। না তাড়াতে পারলে দেশকে জঙ্গিবাদ ও জামায়াত-শিবিরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
সরকার জিরো টলারেন্সে এসে জঙ্গি দমন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডা. ইমরান এইচ সরকার।
বক্তব্যের শুরুতে কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার নিন্দা জানান তিনি।
বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে এ কফিন মিছিল বের হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজু ভাস্কর্য ও দোয়েল চত্বর পার হয়ে হাইকোর্টের মোড়ে আসে মিছিলটি। সেখানে তিন স্তরের পুলিশি নিরাপত্তা থাকায় কফিন মিছিলটি হাইকোর্টের পাশে কদম ফোয়ারা মোড় ও জাতীয় প্রেসক্লাব পার হয়ে সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে যাচ্ছিল। সচিবালয়ে ঢোকার মুখের রাস্তায় তিন স্তরের ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ।
এ কর্মসূচি কেন্দ্র করে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে শাহবাগ, সচিবালয় ও প্রেসক্লাব সংলগ্ন এলাকায়। মিছিলের আগে-পরেও রয়েছে কড়া পুলিশি পাহারা।
একই দাবিতে মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে সারা দেশে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। শুক্রবার (০৬ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হবে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এ মামলাটির তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এখনো মামলাটি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এরপর একে একে খুন হন আরো চার ব্লগার।
ঘাতকরা শুধু ব্লগারদের খুন করেই থেমে থাকেনি। সর্বশেষ তাদের টার্গেটে পরিণত হন জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন। পুলিশ ধারণা করছে, ব্লগার ও প্রগতিশীল লেখকদের বই প্রকাশনার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টিএসসি এলাকায় খুন হন ব্লগার অভিজিৎ রায়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। অভিজিৎ হত্যার একমাস অতিবাহিত না হতেই তেজগাঁও এলাকায় দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে দু’জনকে আটক হলেও মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।
এরপর গত আগস্ট মাসে রাজধানীর পূর্ব গোড়ান এলাকায় দিনের বেলা বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় নীলাদ্রী চ্যাটার্জি নিলয়কে। এ মামলাটিরও তদন্ত শেষ করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা।
তবে মে মাসে সিলেটের ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস খুনের মামলা তদন্ত শেষ করেছেন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এসজেএ/এমআইকে/একে/এএ/এএসআর
** পুলিশি বাধার মুখে গণজাগরণ মঞ্চের কফিন মিছিল
** স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পথে গণজাগরণ মঞ্চের কফিন মিছিল