শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট থেকে: শোকে স্তব্ধ; অনেকটা নিরুত্তাপ সময়। রাজধানীর বইপাড়া হিসেবে খ্যাত শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের কথাই বলছি।
বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) সকালে দুঃখ আর কষ্ট-শোক চেপে শুরু হয়েছে কাজ। বুধবারও (০৪ নভেম্বর) তাই হয়েছে। তবে সেদিন তেমন গতি ছিল না কাজে।
এদিন দুপুরে একাধিক প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা নিরাপত্তা চান। নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু উদ্যোগ-তৎপরতা দেখা গেলেও তাতে সন্তুষ্ট নন এসব মানুষজন। ভয় যেন এখনও তাড়া করে ফিরছে।
ঘটনার পর তিনদিন বন্ধ ছিল আজিজ সুপার মার্কেট। এরপর মার্কেট খোলার দ্বিতীয় দিনে স্বাভাবিক নেই এককালের এই বইপাড়া। বুটিক ফ্যাশন হাউজের আড়ালে ঢাকা পড়ে যে গুটিকয়েক প্রকাশক এখানে টিকে ছিলেন তার মধ্যে একজন ছিলেন জাগৃতির ফয়সাল আরেফিন দীপন। ১৯৮৮ সালে পাঠক সামবেশ থেকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এখানে।
কিছু বছর আগেও অর্ধশত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আজিজ সুপার মার্কেট লেখক-কবি সাহিত্যিকদের ভিড়ভাট্টায় বেশ সরগরম ছিল। তখন কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের সঙ্গে এর তুলনা করতেন কেউ কেউ। কিন্তু প্রায় এক যুগ ধরে সেই ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। আর সেখানে এখন সবচেয়ে বড় আঘাত প্রকাশক হত্যা। এরপর টিকে থাকা নিয়ে অনেকটা শঙ্কায় প্রকাশকরা।
অনেকেই বলছেন, সৃজনশীল ও মূলধারার প্রকাশকরাই বেশি হুমকির মুখে। প্রথাগত ধারার বাইরে গিয়ে তারা যে সৃজনশীলতার চর্চা করছেন তা এখন কতটুকু নির্বিঘ্নে করতে পারবেন- সেই প্রশ্ন রাখেন ম্যাগনাম ওপাস প্রকাশনীর আনোয়ার ফরীদি।
তাদের অনেকেই শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন অনেকেরই কিন্তু শোকটা যেন কাটছে না। তৃতীয় তলার উৎস প্রকাশনের প্রকাশক মোস্তফা সেলিমের অবস্থাও তেমন। কেননা তার পাশেই জাগৃতির অফিস।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, প্রতিদিনই দেখা হতো দীপনের সঙ্গে। কখনও হাত উঠিয়ে কখনও ইশারা-ইঙ্গিতে দিনে কয়েকবার তাদের কুশল বিনিময় হতো। এমনকি মারা যাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগেও দেখা হয়েছিল দীপনের সঙ্গে। ওইদিন দুপুর সোয়া ২টার দিক তাকে হেঁটে যেতে দেখেছিলেন তিনি।
এদিকে, প্রকাশক আনোয়ার ফরীদি বাংলানিউজকে বলেন, ইতোপূবে মৌলবাদ বিরোধী লেখার জন্য অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করা হয় কিন্তু তখনও প্রকাশকদের ওপর হুমকি আসেনি।
শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর থেকে ব্লগার এবং প্রকাশকদের ওপর হুমকি আসতে শুরু করে- যোগ করেন তিনি।
অভিজিতের বই প্রকাশের পর গত মার্চ মাসে দীপনকে সাবধান করেছিলেন এই প্রকাশক। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘দীপন একটু সাবধানে থেকো’। তখন দীপন উত্তরে বলেছিলেন, ‘না কিছু হবে না’।
কিন্তু দীপনকে নির্মমভাবে হত্যার পর তাদের আতঙ্ক যেমন আর কমছে না, তেমনি সৃজনশীল চর্চার জগতে অবাধ বিচরণটা হুমকির মুখে- বলে মনে করেন তারা।
এ নিয়ে সরকারের এখনই চিন্তাশীল উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেও মত তাদের। নয় তো ভবিষ্যতে এমন হত্যাকাণ্ড বা হুমকি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে বলেও তাদের ধারণা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এসএ/আইএ