ঢাকা: দিন দিন রাজধানীর যানজট বেড়েই চলছে। আগামী বছর যানজটের চিত্র আরোও ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর যানজট নিরসনে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেখার বিষয় কতটুক কার্যকর হয় সেই পরিকল্পনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নানামুখী নতুন পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতীয় সংসদের সদস্যরা। তাদের এসব ভাবনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র পর্যালোচনা করে এসব পরিকল্পনার কথা জানা যায়। গত ১৪ অক্টোবর কমিটির দশম বৈঠকের কার্যপত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারসহ একাধিক সদস্যের বক্তব্যেই উঠে আসে রাজধানীর যানজটের চিত্র ও করণীয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, ট্রাফিক আইন ভঙ্গে আমাদের দেশে জরিমানার হার অত্যন্ত সীমিত। এটা পরিবর্তন করা দরকার। এ ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, বিদেশে (কোন দেশের নাম উল্লেখ করেননি) ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিদ্র করার সিস্টেম চালু রয়েছে। একই লাইসেন্স তিনবার ছিদ্র করা হলে সেটি বাতিল করে দেওয়ার বিধান চালু রয়েছে।
ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের জরিমানা বৃদ্ধি করতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানোর জন্য কমিটিকে আহ্বান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জরিমানার হার ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন হারে নির্ধারণ করার প্রস্তাবনার কথাও জানান তিনি।
ট্রাফিক বিভাগের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে উল্টোপথে আসার জন্য জরিমানা নির্ধারণ করা আছে ২৫০ টাকা, রং পার্কিং এর জন্য জরিমানা ২০০ টাকা, লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চালানোর জন্য ২০০ টাকা, হেলমেট ছাড়া চালানোর জন্য ২০০ টাকা, দুর্ঘটনা জনিত কারণে জরিমানা ৫০০ টাকা, অতিরিক্ত স্পিডের জন্য ৩০০ টাকা, সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য ২৫০ টাকা, সিগন্যাল অমান্য করার জন্য ৫০০ টাকা, হাইড্রোলিক হর্ন বাজালে জরিমানা ১০০ টাকা এবং সিট বেল্ট ব্যবহার না করলে জরিমানার হার ৫০০ টাকা।
রাজধানীর যানজট নিয়ে অসায়ত্ব প্রকাশ করে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া জানান, ঢাকার যানজট নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এজন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুজন জয়েন্ট পুলিশ কমিশনারকে সরেজমিনে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রোডে গাড়ির বাড়তি চাপ থাকার কারণে ডিজিটাল সিগন্যাল বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
পুলিশ কমিশনার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হলে রাজধানীর যানজট আরো বৃদ্ধি পাবে। তখন রাজধানীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এজন্য তিনি ডিসেম্বরের আগেই মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ করার অনুরোধ করেন।
যানজট নিরসনে পুলিশ কমিশনার প্রাইভেটকারগুলো গ্যাসের পরিবর্তে তেলে চালানোর প্রস্তাব করেন। এতে যানজট নিরসনে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে বলে মনে করেন। একই সাথে উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে যানজট লাগানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রম্তাব করেন।
সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যাল (বুয়েট) পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার যানজট দূরীকরণে এসটিপিতে ও জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণাপত্রে সবকিছু দেওয়াই আছে। গবেষণালব্ধ সেই সব সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করলেই যানজট সত্যিকার অর্থেই কমবে। সুপারিশমালার অন্যতম ছিল রাজধানীর ফুটপাথ দখলমুক্ত করা এবং রাস্তার অপব্যবহার রোধ করতে পারলেই ৩০ শতাংশ ক্যাপাসিটি বাড়বে। সেটিই যখন হয়নি তাহলে কিভাবে নতুন নতুন এই প্রেসক্রিপশন কাজে লাগবে?
তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটিতে যেসব সুপারিশ আসছে সেগুলো হচ্ছে ডিমান্ড সাইড ম্যানেজমেন্ট। তারা কাজ করতে গিয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেটিই প্রস্তাব করছেন। এটাও ভালো তবে সেটা হতে হবে চৌকশ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে। শুধু আমাদের দেশেই না বিদেশেও প্রাইভেকারকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, তাদের চৌকশ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি করতে হলে বিকল্প ব্যবস্থা আগে করতে হবে। ভালোমানের গণপরিবহন বাড়াতে হবে। তা না হলে কোনো সিস্টেমই কাজে আসবে না।
ডিসেম্বরের মধ্যে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করতে না পারলে যানজট ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়াবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কাজ শুরু হলে ভিআইপি রোড প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ভিআইপিদের চলাচলেও সমস্যা হবে। এ নিয়ে কিছু করতে হলে এখনই ভাবতে হবে।
কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি তার প্রস্তাবনায় বলেন, বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো জোড় সংখ্যার নম্বর ও বিজোড় সংখ্যার নম্বরযুক্ত গাড়ি পর্যায়ক্রমে চালানো যায় কি না ভেবে দেখতে বলেন। একই সাথে যে শহরে গাড়ি চালানো হবে সেই শহরে গাড়ি চালানোর অনুমতি নিতে গাড়ির ক্রয়মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ ফি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
বিভিন্ন দেশের মতো ঢাকা শহরেও অন্য শহরের গাড়ি প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট টোল আদায়ের ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব করেন কমিটির সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
জয়পুরহাট-২ এর সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে আহ্বায়ক করে ঢাকার যানজট নিরসনে তিন সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, গাইবান্ধা-৪ এর সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।
সাব কমিটির সদস্য ফখরুল ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর যানজট নিয়ে আমরা অনেকগুলো পরিকল্পনা করেছি। সাব কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। আমরা ইতোমধ্যে একবার সবাই বসেছি, কিছু পরিকল্পনাও ঠিক করেছি। এরমধ্যে মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী জরিমানার হার বাড়ানোর বিষয়টি রয়েছে। বর্তমানে সড়কের ২০ শতাংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে কীভাবে সড়কের শতভাগ ব্যবহার করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এসএম/এমজেএফ