পঞ্চগড়: বছর দেড়েক আগে শুরু হয় স্কুলের নতুন দ্বিতল ভবনের নির্মাণকাজ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আশা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবহারের অনুপযোগী টিনশেড ভবন ছেড়ে নতুন ভবনে ওঠার।
কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে নতুন ভবনে পাঠদান শুর করা যায়নি পুরোপুরি। উল্টো জায়গার অভাবে এখন স্কুলের মাঠে চলছে পাঠদান।
এ চিত্র পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা এলাকার ডাবরভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দ্বিতল ভবনের পুরো কাজ দেড় বছরেও সম্পন্ন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
অভিযোগ রযেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে নিরুপায় শিক্ষকরা মাঠেই ক্লাস নিতে শুরু করেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মাঠে চলছে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান। জরাজীর্ণ অপর একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরের একটি কক্ষে চলছে চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান। অথচ পাশেই অসম্পূর্ণ নবনির্মিত দ্বিতল ভবন।
এতোবড় ভবন থাকতে বাইরে কেন মাঠে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রধান শিক্ষক কেরামত আলী পরিত্যক্ত টিনশেডে ভবন দেখিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এই ঘরটি অনেক আগেই পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে ওখানে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, নবনির্মিত দুইতলা ভবনের দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা নির্মিত হয়েছে ২০০৬ সালে। এর একটি কক্ষে তৃতীয় শ্রেণি ও অপরটিতে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলে। পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষেই চলে অফিসিয়াল কার্যক্রম। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থদের উপস্থিতি যেদিন বেশি হয় তখন তাদের মাঠে ক্লাস নিতে হয়।
তিনি জানান, ২০১৪ সালের প্রথমদিকে ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু হয় উর্দ্ধমুখী দ্বিতল ভবনের কাজ। ভবন নির্মাণ শেষ। কিন্ত গত দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বর্ধিত ভবনের বারান্দায় গ্রিল বা গার্ডার লাগানো হয়নি। নেই কোনো আসবাবপত্র। ছোট-ছোট শিক্ষার্থীরা সবসময় দৌঁড়াদৌঁড়ি করে। বারান্দায় গ্রিল নেই, কোন সময় কি ঘটে বলা যায় না।
তার অভিযোগ, দ্রত কাজ শেষ করার জন্য বার বার ঠিকাদারকে বলা হলেও কোনো কাজ হয়নি।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তরণী মোহন রায় বলেন, গত ৬ মাস থেকে ওই ঠিকাদার একবার দেখতেও আসেনি। ঠিকাদার তো ঠিকই বিল তুলে নিয়েছেন। এতোবড় ভবন থাকতে যদি মাঠে ক্লাস করতে হয় তাহলে এই কষ্টের কথা আর কাকে বলব?
এ ব্যাপারে ওই ভবন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মো. কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভবনের ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে চুক্তির অপেক্ষায় কাজ করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে খুব তাড়াতাড়ি গ্রিল লাগানোর ব্যবস্থা করব।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আহম্মেদ রফিক জানান, বিভিন্ন অজুহাতে দুই বার সময় বৃদ্ধি করলেও ওই ঠিকাদার তার কাজ শেষ করতে পারেননি। স্কুলের বর্ধিত অংশের কাজে নকশায় কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে রিভাইজ স্টিমেট পাঠানো হয়েছে। তবে বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইপিও) সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
এসআর