ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জঙ্গি তৎপরতায় ঢাকার পাকিস্তানি কূটনীতিক

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
জঙ্গি তৎপরতায় ঢাকার পাকিস্তানি কূটনীতিক

ঢাকা: ইসলামপন্থী জঙ্গি তৎপরতায় পাকিস্তানের সরাসরি মদদের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, ঢাকায় পাকিস্তানি এক নারী কূটনীতিক গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে।

এ চক্রে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের জালে আটক এক জেএমবি সদস্যের জবানবন্দি ও টেলিকথনে মিলেছে বাংলাদেশে পাকিস্তানি ওই কূটনীতিকের ‘তত্পরতার’ নানা তথ্য।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) পদে কর্মরত ফারিনা আরশাদ নানাভাবে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের সহায়তা করছেন। তাঁর মাধ্যমেই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবি সদস্য ইদ্রিস শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন। আগেও তিনি প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একই তথ্য জানিয়েছিলেন।

২০১১ সালের ১ মে এক জঙ্গি নেতার বাসা থেকে ইদ্রিসকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। র‌্যাব তখন তাঁর হেফাজত থেকে উদ্ধার করেছিল ৪৭টি পাসপোর্ট। গত নভেম্বরে সর্বশেষ গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে ইদ্রিসের মোবাইল ফোন যাচাই করে দেখা গেছে, সেখানে ‘নিজের নম্বর’ বলে সংরক্ষণ করা হয়েছে ক্যাপ্টেন অসীম নামের এক পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তার নম্বর। পাকিস্তানের বিমানবন্দরে কর্মরত এ গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে ইদ্রিসের কথোপকথনের প্রমাণও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি মহানগর হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদের কাছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ইদ্রিস পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগের নানা তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, ফারিনা তাঁকে একটি ম্যাজেন্টা রঙের গাড়িতে করে একবার ঘুরিয়ে ৩০ হাজার টাকাসহ ফকিরাপুলে নামিয়ে দেন।

গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ইদ্রিস শেখসহ চারজনকে। তাদের আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইদ্রিস জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পাকিস্তান হাইকমিশনের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে জেএমবি নেতাদের ভালো সম্পর্ক আছে।

গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৫০ বছর বয়সী ইদ্রিসের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারীতে। তার বাবার নাম কাওসার শেখ। ইদ্রিস ১৯৮৫ সালে ভারত হয়ে পাকিস্তানে যান। সেখানে ‘পাক-মুসলিম অ্যালায়েন্স’ নামের একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে একবার জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেন। ইদ্রিস দীর্ঘদিন পাকিস্তানে বসবাস করেছেন এবং অসংখ্যবার সেখানে যাতায়াত করেছেন। গত দুই বছরে তিনি ৪৮ বার পাকিস্তান গেছেন বলে তাঁর পাসপোর্টে প্রমাণ রয়েছে । ইদ্রিস পাকিস্তানে শাহনাজ বেগম নামের এক স্কুল শিক্ষকাকে বিয়ে করেছিলেন। সেখানে মোহাম্মদ আদিল নামের ছেলে আছে তাঁদের। দেশে ফিরে ২০০০ সালে ইদ্রিস ফের বিয়ে করেন মনোয়ারা বেগম নামের এক প্রতিবেশীকে। সেই সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। ইদ্রিস ২০০৭ সাল থেকে ঢাকায় বসবাস করছেন। তিনি কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ২০১২ সালে এয়ার টিকিটিং ও ভিসা প্রসেসিং ব্যবসায় যুক্ত হন তিনি। তখন বাবুল নামের এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কামাল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়। কামাল পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যেই নিজেকে ‘পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোক’ বলে ইদ্রিসকে জানিয়েছিল। বাবুল একপর্যায়ে পাকিস্তানে চলে যান এবং ইদ্রিসকে ফারিনা আরশাদের মোবাইল নম্বর দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে।

বালাদেশে জঙ্গিদের অর্থায়ন ও সংগঠিত করতে পাকিস্তানি নাগরিকরা তত্পরতা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা বরাবরই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন। এ ধরনের তত্পরতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা মাযহার খানকে বহিষ্কার করা হয়। সম্প্রতি র‌্যাব ও ডিবির অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৮ জন পাকিস্তানি। তাদের মধ্যে ১৩ জন ব্যবসায়ী পরিচয়ে পাকিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত করে। তাদের বিরুদ্ধে জাল মুদ্রা তৈরি ও ব্যবসার অভিযোগ ছিল।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তানসহ কয়েকটি রাষ্ট্র গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তারা বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করাতে চায়। পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনেকের সঙ্গে জেএমবিসহ জঙ্গি নেতাদের যোগাযোগের তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনও ঘটেছে বিভিন্ন সময়। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ।

বাংলাদেশ সময় ০৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।