ঢাকা: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদিন পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন দেশ। প্রতি বছরের মতো ৪৫তম বিজয় দিবস উদযাপন করতে রাতভর শহর জুড়ে ছিলো তরুণ্যের উল্লাস।
দিবসের আগে থেকে শুরু হয় নানা আয়োজন। বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসব অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্রে থাকেন তরুণরা।
তাদের কাছে এবারের বিজয়টি আরও বেশি আনন্দমুখর। কারণ, গত ২২ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আল-বদর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও একাত্তরের ‘চট্টগ্রামের ত্রাস’ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ রায় তরুণদের বিজয় উল্লাস যেনো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর টিএসসিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে তরুণদের বিজয় উল্লাস। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রাতভর চলতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হৈ-হুল্লোড়, নাচানাচি, আতশবাজি ফোটানো, আনন্দ মিছিলসহ নানা আয়োজন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর উদ্যোগে টিএসসি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে বিজয় উৎসব পালন করতে জড়ো হন শত শত তরুণ-তরুণী। গান, নাচ আর আতশবাজিতে উৎসবের আনন্দ যেনো অন্য মাত্রা পায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা তরুণদের জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করি। তারা যেনো স্বাধীনতার চেতনাকে মনে-প্রাণে ধারণ করে মুক্তির স্বাদ নিতে পারেন। এভাবেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে তরুণ প্রজন্ম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহের নেগার বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পর আমরা কলঙ্কমুক্ত হয়েছি। বাংলাদেশ এবার সত্যিকারের স্বাধীন। আমরা স্বাধীন।
বন্ধুদের সঙ্গে আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম। বাংলানিউজকে তার আনন্দ জানালেন এভাবে, আমরা মুক্ত আমরা স্বাধীন। আমাদের রুখবে কে!’
তরুণ রেজভী যেমন বললেন, বিজয় দিবসে আর ঘরে থাকতে ইচ্ছে করলো না। বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে এসেছি। ভালো লাগছে এই ভেবে যে, মুক্ত পাখির মতো আমরাও মুক্ত।
বিজয় উৎসব পালনে কোথাও কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকেও ছিলো কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
টিএসসি চত্বরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাফর উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নিরাপদে বিজয় উৎসব পালন করছেন সবাই।
এদিকে, বিজয় উৎসব পালন করতে শহরের দালানগুলোকে সাজানো হয় লাল-সবুজ আলো দিয়ে। রাত ১২টা থেকে শহরের মোড়ে মোড়ে বাজতে থাকে বিজয়ের গান। অনেক এলাকায় চলে ০৭ মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ। যে ভাষণে সাড়া দিয়ে রক্ত দিয়েছে ৩০ লাখ বাঙালি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
জেডএফ/এএটি/এসএস