ঢাকা: দেশমাতার স্বাধীনতা অর্জনের পথে অসংখ্য মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে প্রাণ দিতে হয়েছিল দু’জন বীর ক্রিকেটারকেও।
মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল। পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে হয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য। পরে রাজাকারদের হাতে শহীদ হন জুয়েল। এর আগে, ২৫ মার্চের কালরাতে শহীদ হন ক্রীড়া সংগঠক মুশতাক।
এ দুই বীর শহীদ ক্রিকেটারের স্মরণে অনেক বছর ধরেই হয়ে আসছে শহীদ জুয়েল একাদশ ও মুশতাক একাদশের মধ্যকার প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ। এবারও যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের মধ্য দিয়ে তাদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসের বিকেলে (সাড়ে ৪টায়) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। আকরাম-নান্নু-সুজন-দুর্জয়-শান্ত-অপি-বিদ্যুতদের মতো সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা এদিন ব্যাট-বল হাতে নিচ্ছেন শহীদদের স্মরণে।
শহীদ মুশতাক একাদশ: হাসানুজ্জামান ঝড়ু, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত, আজহার হোসেন সান্টু, ফারুক আহমেদ, নাইমুর রহমান দুর্জয়, রফিকুল ইসলাম খান, সানোয়ার হোসেন, হাসিবুল হোসেন শান্ত, আনোয়ার হোসেন মুনির, খালেদ মাহমুদ সুজন, নিয়ামুর রশীদ রাহুল, এনামুল হক মনি, এহসানুল এক সেজান, সাইফুল ইসলাম।
শহীদ জুয়েল একাদশ: জাহাঙ্গীর আলম, জাভেদ ওমর বেলিম, হাবিবুল বাশার সুমন, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান, খালেদ মাসুদ পাইলট, সাইফুল্লাহ জেম, আলমগীর কবির, শফিউদ্দিন আহমেদ বাবু, আতহার আলী খান, মাহমুদুল হাসান রানা (বিকাশ), মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ রফিক, মেহরাব হোসেন অপি।
শুধু ক্রিকেট ম্যাচেই সীমাবদ্ধ থাকেনি শহীদ-স্মরণ। দেশের হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের দুই পাশের গ্যালারির নামকরণ করা হয়েছে এ দুই শহীদের নামে। উত্তর গ্যালারির নামকরণ করা হয়েছে শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড। আর পশ্চিমেরটা শহীদ মুশতাক স্ট্যান্ড। ক্রিকেটের মধ্যেই বেঁচে আছেন এই দুই শহীদ ক্রিকেটার।
শহীদ জুয়েল
আজাদ বয়েজ ক্লাবের ওপেনিং ব্যাটসম্যান জুয়েল সময়ের তুলনায় ছিলেন ভীষণ স্টাইলিশ আক্রমনাত্মক ক্রিকেটার। পূর্ব পাকিস্তান তথা সমগ্র পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান। টিকাটুলির হাটখোলায় থাকতো জুয়েলের পরিববার। ৩০ আগস্ট রাতে বন্ধু আজাদের (শহীদ আজাদ) বাসায় যান তিনি। ওই রাতেই রাজাকাররা তাদের ধরে নিয়ে যায়। রাতে রমনা থানায় রাখা হতো আর দিনে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে টর্চার করা হতো জুয়েলকে। ১ তারিখ ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেলে আর রমনা থানায় আনা হয়নি জুয়েলকে। ২ তারিখ সকালে জুয়েলের বাবা থানায় গিয়ে তাকে আর দেখতে পাননি। এ জন্য পরিবারের সদস্যরা ধরে নেন ২ তারিখেই জুয়েলকে হারিয়েছেন তারা।
শহীদ মুশতাক
তিনি ছিলেন একজন ক্রিকেটে অন্তঃপ্রাণ সংগঠক। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানীদের নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞে তার মৃত্যু হয়। মিরপুর স্টেডিয়ামের একটি গ্যালারির নাম রাখা হয়েছে এই শহীদ ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের নামে।
গত বছরের আয়োজন
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল একখণ্ড বিজয় উদ্যানে। লাল-সবুজের রঙে পতাকার বাহার তো ছিলই, সঙ্গে শহীদ জুয়েল আর শহীদ মুস্তাকের নামে গঠিত দুই দলের খেলোয়াড়দের লাল-সবুজ যেন জানান দিচ্ছিল, সবজু জমিনে রক্তরাঙা সূর্যের বিজয়গাঁথা।
সাবেক ক্রিকেটার আকরাম-নান্নু-সুমন-রফিক-আতাহার আলী-শান্ত-ফারুক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশের উজ্জ্বল তারকারা উপস্থিত হয়েছিলেন মিরপুরের মাঠে। হাবিবুল বাশারের ফিফটিতে শহীদ মুশতাক একাদশকে হারিয়ে বিজয় উদযাপন করে শহীদ জুয়েল একাদশ। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শহীদ জুয়েলের বড় বোন সুরাইয়া খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এসকে/আইএ