ঢাকা: রাস্তাজুড়ে ময়লার স্তুপ, মাঝে মাঝে খানা-খন্দক, তাতে ভেসে ওঠা মাটি দেখে মনে হবে- এ যেন ইঁদুরের বসতি। একপাশে ভ্যানগাড়ির গ্যারেজ, ভাসমান হোটেল, রাজনৈতিক দলের ক্লাব, অনেকখানি রাস্তা আবার ময়লা ফেলার কনটেইনারের দখলে।
এভাবেই দুই লেনের রাস্তাটির এক পাশ এখন মৃতপ্রায়। আজিজ সুপার মার্কেট থেকে পরীবাগের মোড়ের দিকে আসতে এমন চিত্রে অভ্যস্তও হয়ে গেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। দিনের পর দিন তারা দেখছেন, এখানে রাস্তা ঠিকই আছে, কিন্তু নেই আগের প্রশস্ততা, নেই সেই ব্যস্ততাও।
কাঁটাবন থেকে শাহবাগ আসার রাস্তায় হঠাৎ এমন যানজট লেগে যায় যে, তার রেশ লাগে চারদিকে, স্থবির হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। কিন্তু কারও যেন তেমন কোনো বিকার নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার মাঝখানে কনটেইনার রাখার কারণে ময়লা পঁচে প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন রাস্তার মাঝেও। দূষিত করছে আশপাশের পরিবেশ। পথচারীরাও কষ্ট করে নাকে-মুখে কাপড় ব্যবহার করেই পথ চলছেন। আর ফুটপাতের বড় অংশ হোটেল, গ্যারেজ ও ক্লাবের দখলে থাকায় বোঝার জো’ নেই নেই এটা রাস্তারই অংশ। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে রাস্তাটি।
এলাকাবাসী জানান, রাস্তাটির এমন বেহালদশার কারণে অনেকে চলতে গিযে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। অনেকে মাইক্রোবাস বা প্রাইভেটকারে যাওয়ার সময় ময়লার দুগর্ন্ধে গাড়ি থেকেই নেমে আবার বাকি পথটুকু হেঁটে যান।
রাস্তার মাঝখানে ময়লা কনটেইনার রাখায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা পরিষ্কারের কাজ করেন। এতে বেশি দুগর্ন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ময়লা পরিষ্কারের পুরো সময়ই ওই রাস্তাটি প্রায়শই বন্ধ থাকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শাহবাগ থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই ভ্যান-রিকশা গ্যারেজের মালিক, হোটেল মালিকরা এসব করেন। ফলে ভয়ে এসবের কোনো প্রতিবাদও তারা করতে পারেন না।
পরীবাগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সবুর বাংলানিউজকে বলেন, ময়লার কনটেইনারটি মোতালেব প্লাজার পেছনে ছিল। মাসখানেক আগে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতার অভিযোগের কারণে তা সরিয়ে রাস্তার মাঝখানে বসানো হয়েছে।
মোতালেব প্লাজার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা নাসিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই মেয়েকে (রাইসা) নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসার সময় মুখে কাপড় দিয়ে যাই। কতোদিনে যে এই ডাস্টবিন সরবে, তা আল্লাহই জানেন!
পরীবাগ মোড়ের একটি হাসপাতালের কর্মচারী শাহীন রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে অনেক অভিযোগ করেছি। কিন্তু তিনি বিষয়টি কানেই নেন না। ফলে কেউ আর এখন মাথাও ঘামান না।
এ রাস্তার মোড়ে বসা ভাসমান হোটেল মালিকরা জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাড়াও স্থানীয় ছাত্রনেতা ও পুলিশকে প্রতি মাসে মাসোহারা দেন তারা। তার বিনিময়েই সেখানে বসার এ সুযোগ পেয়েছেন।
প্রতিদিন কতো টাকা করে দিতে হয় জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দোকানি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন সবমিলে দুইশ’র বেশি টাকা শুধু চাঁদাই দিতে হয়। আর দোকান বসানো বাবদ ফি তো আছেই।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের ক্লিন ইন্সপেক্টর রাশেদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ট্রান্সফার স্টেশনের কাজ চলছে। তা তৈরি হলেই কনটেইনারটি সরিয়ে নেওয়া হবে।
তবে রাস্তাটি পরিস্কার রাখতে মাঝে মাঝে সিটি ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালানো হয় এবং অবৈধ হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অন্যান্যরা আবার গিয়ে বসেন বলে জানান তিনি।
২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ হামিদ খান বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগের কারণে কনটেইনারটি সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ রাস্তাটিতে যতো অবৈধ স্থাপনা আছে তা উচ্ছেদ করতে ডিসিসিকে চিঠি দিয়েছি। ওয়ার্ডে যাতে কেউ চাঁদাবাজি না করতে পারেন এবং সুন্দর মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলতে পারি তার জন্য রাস্তার হকারদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করছি।
বাংলাদেশ: ০৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
এমআইকে/এএসআর