ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তারুণ্যের রাতের ঠিকানা পলাশী

হাসিবুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
তারুণ্যের রাতের ঠিকানা পলাশী ছবি :কাশেম হারুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সিলেট থেকে কয়েকদিনের জন্য কাজে ঢাকায় এসেছেন ডা. শামস্‌ ও সুকন্যা দম্পতি। রাতে চায়ের তেষ্টা পেতেই এ যুগল মধ্যরাতে পৌষের শীত উপেক্ষা করে চলে এসেছেন পলাশী।

তাদের সঙ্গে রয়েছেন জন ও তন্ময় নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।

শুধু শামস্‌-সুকন্যারাই নন, তাদের মতো আরও অনেকেই রাতে আড্ডাসহ নাস্তা করতে আসেন পলাশীতে। যদিও তাদের মধ্যে সিংহভাগই বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে পলাশী রাতে চা ও হালকা নাস্তা করার জন্য আশেপাশের এলাকার তরুণদেরও কম-বেশি টানে।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) দিনগত রাত পৌনে ২টার দিকে দেখা গেলো, বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী পলাশী মোড়ের টং দোকানগুলোতে নাস্তা করছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ ছিলেন।

কেউ ডিম-পরোটা খাচ্ছেন, স্বাস্থ্য সচেতন কেউবা হয়তো তেলে ভাজা পরোটার বদলে খাচ্ছেন ডিম-দুধ। এটি শুধু একদিনের চিত্র নয়, সারাবছরের।

রাতে পলাশীতে গেলেই দেখা যাবে, কেউ বসে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ হয়তো শখের গিটার নিয়ে রোড আইল্যান্ডে বসে টুংটাং সুর তুলছেন, সঙ্গে রয়েছেন দু-চারজন বন্ধুও।

চোখে পড়বে, রাস্তার এক কোণে বসে আপন মনে নাগরিক চিত্র আকছেন চারুকলার কোনো শিক্ষার্থী। কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলের নেতা গোছের কেউ দল নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন আর তাদের পাশ থেকে চোখ রাখছেন পলাশীতে চা খেতে আসা দু-একজন সাংবাদিক। কখন কী ঘটে। এভাবেই পলাশীতে কাটতে থাকে রাত।

এস এম হলের হলের দুই শিক্ষার্থী সকালে পরীক্ষা থাকায় রাতে নাস্তা করতে এসেছেন। তাদের দেখা যায় চাইনিজ দিয়ে পরোটা খাচ্ছেন।

মেহেদী হাসান ও তানভীর সায়েম নামে ওই দুই শিক্ষার্থী জানান, পলাশীতে আড্ডা দিতে দিতে খাওয়ার মজাই আলাদা।

যাদের কথা দিয়ে শুরু, সেই শামস্‌-সুকন্যা দু’জনই কর্মসূত্রে সিলেটে থাকেন।

রাতের পলাশীর সম্পর্কে তারা জানান, শিক্ষাজীবনে নিয়মিতই আসতেন পলাশীতে চা খেতে আর আড্ডা দিতে। কর্মব্যস্ত জীবনে থাকা হয় রাজধানী থেকে বহু দূরের শহরে। সেখানে চাইলেও রাতে বেরিয়ে চা খাওয়া হয়ে ওঠে না। দু’দিন আগে ঢাকায় এসেছেন তাই পলাশীতে নাস্তা করতে চলে এসেছেন।

পলাশীতে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে চলে আড্ডাবাজি চা-নাস্তা। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে আবুল ভাইয়ের তেলে ভাজা পিঠা, মানিক কিংবা উজ্জ্বলের চা সঙ্গে ফকরুল ভাইয়ের ডিম-পরোটা।

রাত দু’টো-তিনটার দিকে প্রায় অধিকাংশ নগরবাসী যখন ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে, পলাশী তখন যেনো জণাকীর্ণ গ্রাম্য বাজার।

পলাশীর রাতের এ আড্ডা শুধু দু’-চারটি দোকানেই সীমাবদ্ধ থাকে না, পুরো এলাকা জুড়েই ছড়িয়ে পড়ে। একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের কোণা থেকে শুরু করে অন্যদিকে বুয়েটের নতুন ভবন (ইসিই ভবন)। পুরো এলাকা জুড়েই ছোট ছোট দোকান আর ছোট ছোট জটলা।

রাত যতো গভীর হয় প্রভাত ততো নিকটে আসে। কিন্তু এ চিরন্তন সত্য পলাশীতে এসে যেনো মিথ্যায় পরিণত হয়েছে। এখানে রাত যতো গভীর হয় আড্ডা ততো জমে ওঠে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এইচআর/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।