ঢাকা: সিএনজি চালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম কিছুতেই থামছে না। আগের চেয়ে অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানোর পরও, মিটারের ভাড়ার সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিচ্ছেন চালকরা।
এছাড়া অধিকাংশ চালকরা এখনও মিটারে নয়, চুক্তিতেই গন্তব্যে যেতে রাজি হচ্ছেন। এছাড়া মিটার জালিয়াতের অভিযোগও করেছেন একাধিক যাত্রী।
যাত্রীদের দাবি, মিটারের ভাড়া কম দাবি করে নানা অজুহাত দেখান চালকরা। কিন্তু তাদের দাবি অনুযায়ী মিটারের ভাড়া বাড়ানোর পরও, তারা জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করছেন।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলানিউজের সরেজমিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, শাহবাগ মোড়, মহাখালী, বনানী, গুলশান, বাড্ডাসহ বিভিন্ন সড়কের মোড় ঘুরে অন্তত ৩০ জন অটোরিকশা চালক ও ৫০ জনের বেশী যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র পাওয়া যায়।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মহাখালী ওয়্যারলেস গেট থেকে হাবিব ওয়াহেদ কারওয়ান বাজারে যাওয়ার জন্য তিনজন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলেন। কেউ মিটারে যেতে রাজি হননি। চতুর্থজন মিটারের ভাড়ার সঙ্গে ২০ টাকা বেশি দাবি করেন। অবশেষে ২০ টাকা বেশি দিয়েই গন্তব্যে রওনা হন হাবিব ওয়াহেদ।
হাবিব রওনা হওয়ার পর ওই স্থানে অবস্থান করা একাধিক যাত্রী জানান, অটোরিকশা চালকরা যা বলবেন তাই শুনতে হবে। তাদের মনের মতো ভাড়া না হলে কোথাও যান না। এক্ষেত্রে যাত্রীদের কোনো সমস্যা দেখে না চালকরা।
নিয়মিত অটোরিকশার যাত্রী পীযুষ জানান, এখনও শতকরা ৮০ ভাগ চালকরা ভাড়ার চুক্তি করে চলাচল করছেন। মিটারে যাতায়াত করার সংখ্যা একেবারেই কম। আর উপায় না পেয়েই যাত্রীরা এভাবে চলাচল করছেন।
তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ভীতি দেখালে চালকরা মিটারের নিয়ম মেনেই গন্তব্যে যেতে রাজি হন। মধ্য বাড্ডায় এমন দৃশ্যের দেখা মিললো।
শরিফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী মিটারের হিসাবে উত্তরায় যাবেন। কিন্তু অটোরিকশা চালক ভাড়া মিটিয়ে যাবেন। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় তাদের মধ্যে। শরিফুল ইসলাম পুলিশের ভয় দেখাতেই মিটারের ভাড়ায় চালক যেতে রাজি হন। এসময় অবশ্য চালক মিটার ছাড়া ২০ টাকা বেশি দাবি করেন।
দৃশ্যটি কাছ থেকে দেখছিলেন হাফিজুর রহমান। বাংলানিউজকে বলেন, শুধু আইন করলেই হবে না। আইনের প্রয়োগ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করতে হবে। তবেই সঠিকভাবে আইনের সুফল পাবেন সবাই।
তবে ব্যতিক্রমও পাওয়া গেলো। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এ প্রতিবেদক যাত্রী সেজে আগারগাঁও যেতে চাইলে, ইউনুস নামে এক অটোরিকশা চালক কোনো শর্ত ছাড়াই মিটারের ভাড়ায় যেতে রাজি হন।
ইউনুছ জানান, অধিকাংশই চুক্তি ও মিটার ছাড়া বেশি ভাড়া নেন, এটি ঠিক। তবে সবাই যে একরকম তা নয়।
অটোরিকশা চালকদের দাবি, সড়কে তাদের বিভিন্ন চাঁদা ও মুচলেকা দিতে হয়। মিটারে যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, এতে তাদের লাভ হয় না।
চালক তারেক বলেন, ট্রাফিকসহ অনেককেই আমাদের চাঁদা দিতে হয়। এছাড়া যানজটে পড়ে থাকলে অনেক বেশী সময় ক্ষতি হয়ে যায়। আর ছুটির দিনে ভাড়া কম হয়। সবমিলিয়ে পরিস্থিতির শিকার হয়েই আমরা এরকম করি।
গত ১০ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ’র এক সুপারিশের ভিত্তিতে বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানো হয়।
০১ নভেম্বর থেকে বর্ধিত ভাড়ায় প্রথম দুই কিলোমিটার ৪০ টাকা (যা আগে ছিলো ২৫ টাকা), দুই কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা (আগে ছিলো সাত টাকা ৬৪ পয়সা) করে অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়।
এছাড়া মালিকের জমার পরিমাণ ৬শ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৯শ টাকা। চট্টগ্রামে আগামী ০১ জানুয়ারি থেকে এ হিসাবে চলা শুরু করবে সিএনজি চালিত অটোরিকশা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
একে/এসএস