ঢাকা: দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এখন অত্যন্ত দক্ষ,সুসংগঠিত এবং গতিশীল বলে মন্তব্য করেছেন আধা সামরিক এ বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বিজিবি দিবস-২০১৫ উপলক্ষে বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০১০ সালে নতুন নাম নিয়ে যাত্রা করা বাহিনীটি সম্পর্কে এ কথা বলেন তিনি।
আজিজ আহমেদ বলেন, বিজিবি একটি ঐতিহ্যবাহী বাহিনী। যার ইতিহাস ২শ’২০ বছরের পুরোনো। যদিও ২০০৯ সালে একটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পুরো বাহিনীর ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিয়েছিল। তবে বিগত বছরগুলোতে বিজিবি’র বর্তমান সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সেই কালিমা মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বিজিবি এখন অতীতের বিডিআর এর থেকেও অত্যন্ত দক্ষ, সুসংগঠিত এবং গতিশীল একটি বাহিনী।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিজিবি দিবস। দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি’র নাম বদলের পাঁচ বছর। ২০১০ সালের এ দিনে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) নাম পরিবর্তন করে নতুনভাবে যাত্রা শুর হয় আজকের বিজিবি’র। যদিও এই নাম পরিবর্তনের ইতিহাস মোটেই সুখকর ছিল না।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে কিছু উচ্ছৃঙ্খল জওয়ান ইতিহাসের বিভীষিকাময় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। ওই ঘটনায় বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ দেন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। এরপরেই এ বাহিনীর নাম পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের দাবি ওঠে। পরে বাহিনীর নাম ও পোশাক পরিবর্তনসহ ব্যাপক সংস্কার আনা হয়। ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর নতুন নামে এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।
তবে নতুনভাবে সংগঠিত বিজিবিতে আমূল পরিবর্তন এসছে বলে জানান বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেন, বিজিবিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে, বিগত বছরগুলোতে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে এর সরঞ্জামাদি, অস্ত্র ইত্যাদিতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে বিজিবির কলেবরও।
১৭৯৫ সালের ২৯ জুন মাত্র ৪৪৮ জন সৈন্য নিয়ে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে গোড়াপত্তন হওয়া বিজিবি এখন জনগণের আস্থার জায়গা।
এ বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, প্রায় ৫৪ হাজার জওয়ানের এই বাহিনী সফলতার সঙ্গে সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও অন্যান্য বাহিনীকে সহাযোগিতা করে আসছে। ফলে বিজিবির উপর দেশ ও জনগণের এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে।
সারা দেশে প্রায় সাতশ’র মত বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে উল্লেখ করে মেজর জেনারেল আজিজ বলেন, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এদেশের প্রায় পাঁচশ ৩৯ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত ছিল। সাম্প্রতিককালে তার অধিকাংশ এলাকাই বিজিবির আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আগামী বছর মার্চের পর থেকে স্থলে সীমান্তে মাত্র ১৯৫ কিলোমিটার এবং সুন্দরবনে ৬০ কিলোমিটার বিজিবির আওতার বাইরে থাকবে। তবে ২০১৬ সালের শেষ দিকে সেটাও বিজিবির আওতাভুক্ত হবে।
তিনি জানান, বিজিবির সাংবিধানিক দায়িত্ব পাঁচটি। এগুলো হল- সীমান্ত রক্ষা, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ করা, দেশে যুদ্ধ লাগলে সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে এসে যুদ্ধ করা, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দেশের বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা এবং সরকার প্রদত্ত যেকোন দায়িত্ব পালন করা।
বিজিবি এসব দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে। জওয়ানদের অনুপ্রাণিত করতে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারীদের জন্য পুরস্কার আর শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে।
জানা যায়, এ বছরের বিজিবি দিবসে সদর দফতর পিলখানাসহ দেশের অঞ্চল, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও ইউনিটগুলোয় ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হবে পিলখানার বিজিবি সদর দফতরে।
দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় মহাপরিচালকের রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন ও ‘সীমান্ত গৌরব'-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। রোববার সকালে বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পিলখানায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৯টায় পিলখানায় প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন তিনি।
এ সময় সাহসিকতার জন্য ৬০ জনকে বিজিবি সদস্যকে পদক দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও ও খাগড়াছড়ির জালিয়া পাড়ায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট তিনটি হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধনের ফলক উন্মোচন করবেন শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী বীর উত্তম খন্দকার ফজলুর রহমান মিলনায়তনে (সাবেক দরবার হল) দরবার (বৈঠক) করবেন। এদিন বিজিবি সদস্যদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত ‘সীমান্ত ব্যাংক’-এর লোগো নির্বাচনও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে সীমান্ত ব্যাংকের ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ (ব্যাংক পরিচালনার জন্য ইচ্ছাপত্র) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে তুলে দেবেন।
এছাড়া বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটগুলোয় আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন ও অধিনায়কদের বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে।
বিজিবির ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এই বাহিনীর নাম ছিল ইপিআর অর্থাৎ ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে এর নাম হয় 'বাংলাদেশ রাইফেলস' (বিডিআর)। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) সদস্যরা। স্বাধীনতা যুদ্ধে ইপিআরের ৮০০ সদস্য শহীদ হন। যাদের মধ্যে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি লাভ করেন ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রউফ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ইপিআর বাহিনীকে পুনর্গঠন করে এর নাম রাখা হয় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)। ২০০৯ সালে পিলখানা সদর দপ্তরে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের বিভীষিকাময় নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিডিআরের ২১৫ বছরের গৌরবময় অধ্যায়ের ছন্দপতন ঘটে। এ বাহিনীর নাম ও পোশাক পরিবর্তন করে নতুন আইনও প্রবর্তন করা হয়। ২৩ জানুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবির পতাকা উত্তোলন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
জেপি/আরআই