ঢাকা: বর্তমান সরকারের নেওয়া নানান পদক্ষেপে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কার্যক্রম এখন আরও গতিশীল হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকালে বিজিবি দিবস-২০১৫ উদযাপনের কুচকাওয়াজ শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে আজকের বিজিবি ও তৎকালীন ইপিআরের ভূমিকার কথা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২শ’ ২০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এই বাহিনীর রয়েছে গৌরবময় সমৃদ্ধ ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধে আজকের বিজিবি ও তৎকালীন ইপিআর’র গৌরবময় ভূমিকা প্রশংসনীয়। এই বাহিনী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বাহিনী দুঃসাহসী কাজ করেছিলো বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআর’র বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে প্রচার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেস যোগে প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী এবং আরও ৩ সদস্যকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড এ বাহিনীর ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। সে সময় সরকার গঠনের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ন্যাক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাকে মোকাবেলা করতে হয়। আপনাদের সম্মিলিত সহযোগিতায় সেদিনের সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল।
বিডিআর বিদ্রোহের সাথে সম্পৃক্ত উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে এ বাহিনী এখন সম্পূর্ণ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
সীমান্ত ব্যাংকের লোগো উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিজিবি গতিশীল ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আপনাদের কঠোর পরিশ্রমে এ বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, সীমান্ত রক্ষাসহ এ বাহিনীর ওপর অন্য অর্পিত দায়িত্ব যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলাসহ দেশ গঠনমূলক কাজে ভূমিকা ও পেশাদারিত্ব আজ সর্ব মহলে প্রশংসিত।
স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এদেশের সীমান্ত রেখা সুনির্দিষ্ট থাকা একান্তভাবে জরুরি ছিলো। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। এটা আমাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাফল্য।
সীমান্তে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বে পালনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার, সীমান্ত অপরাধ বহুলাংশে কমেছে এবং বিএসএফের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে সীমান্তে নিহতের ঘটনা কমে এসেছে বলে জানান তিনি।
এ বাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাস করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির অপারেশনাল কার্যক্রমকে বেগবান ও গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি বিগত ২৩ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে বিজিবির পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। এরপর বিজিবির নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ৪টি রিজিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এই বাহিনীকে আরও গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা হয়েছে।
এসময় বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো স্থাপন, চারটি নতুন সেক্টর ও চারটি রিজিয়নাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো স্থাপন, ২০০৯ সালের সংকট কাটিয়ে ওঠার পর থেকে এ যাবত ২২ হাজারের অধিক লোক নিয়োগ দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন, বিজিবিতে এ বছরই প্রথমবারের মতো ১শ’ জন নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিজিবি’র অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবির নিজস্ব এয়ার উইং সৃজনের কাজ পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে।
বিজিবি সদস্যদের সার্ভিস রেকর্ড কম্পিউটারাইজেশন, বিজিবির অভ্যন্তরীণ দাপ্তরিক কাজে নিজস্ব ই-মেইল ব্যবস্থা (জিম্ব্রা মেইল), ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থা চালু এবং আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পাবর্ত্য এলাকায় রেডিও লিংক স্থাপনসহ ২৫২টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এন্টেনা স্থাপনের কথাও উল্লেক করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০টি ডগ চালানোর জন্য বিজিবির ২০ জন সদস্যকে ভারতে ডগ হ্যান্ডেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বিজিবিতে কর্মরত অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্য পদবীর সৈনিক ও অসামরিক কর্মচারীদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য বিজিটিসিএন্ডএস, রিজিয়ন, সেক্টর ও বিএসবি এর ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এসময় বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ৮ জানুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের ১ম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করেছিলেন এবং তার প্রত্যাশা ছিলো এ বাহিনী দেশের সীমান্ত রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধের মাধ্যমে সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সবশেষে জাতির জনকের প্রত্যাশার কথা স্মরণ সবসময় দেশপ্রেম ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এই বাহিনীর সুনাম, মর্যাদা সমুন্নত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
একইসঙ্গে বলেন, আমরা এখন পরমুখাপেক্ষী নই। বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনকারী দেশ। কারও কাছে মাথা নিচু করে চলবো না।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল ৯টার দিকে পিলখানার বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন।
প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
এসময় প্রধানমন্ত্রীকে বিজিবির চৌকস দল সশস্ত্র সালাম দেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন।
এসময় বিজিবির চৌকস সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড পদক, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সেবা পদক, প্রেসিডেন্ট পদক ও প্রেসিডেন্ট সেবা পদক প্রাপ্তদের পদক পরিয়ে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
এমইউএম/এমআইকে/এএ
** পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে বিজিবি
** অতীতের থেকে আরো সুগঠিত বাহিনী