ঢাকা: দু’জন নারীকে ঘিরে ধরেছেন আট দশজন রিকশাচালক ও কয়েকজন যুবক। টাকা বাড়িয়ে দিয়ে কিছু একটা কেনার জন্য দাঁড়িয়েছেন তারা।
কৌতুহল নিয়ে কাছে পৌঁছাতেই দেখা গেল, মাদক কেনার জন্য সবার এমন হুড়োহুড়ি।
রাজধানীর নিউমার্কেটের এক নম্বর গেটের সামনে এভাবেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, চরস, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। মাদক বিক্রির এ স্পটের কাছে নীলক্ষেত মোড়েই রয়েছে নিউমার্কেট থানা পুলিশের একটি পিক-আপ ভ্যান।
গত ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটা শুধু ওইদিনের দৃশ্য নয়, প্রতিদিনই এভাবে নিউমার্কেট এক নম্বর গেট এলাকায় পুলিশের চোখের সামনেই বিক্রি হচ্ছে এসব মাদকদ্রব্য। কিন্তু পুলিশ যেন কিছুই দেখছে না।
মাদক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ফুটপাত দোকানদারদের অভিযোগ, পুলিশকে নিয়মিত বখরা দিয়েই মাদকের এ রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছে একটি চক্র। নিউমার্কেটের এক নম্বর গেট সংলগ্ন ডাস্টবিন, পোস্ট অফিস এবং নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের পেছনের সড়কে এসব মাদক বিক্রেতারা ঘুরে-ফিরে মাদক বিক্রি করেন। অসাধু কিছু পুলিশ সদস্য অর্থের বিনিময়ে মাদক ব্যবসার এ স্পটকে নিরাপত্তা দেন বলেও অভিযোগ তাদের।
এখানে ২০, ৫০ ও ১০০ টাকায় বিক্রি হয় গাঁজার পুরিয়া, চরস ৬০ টাকা এবং ইয়াবা বিক্রি হয় সাড়ে তিনশ’ টাকা করে।
পুলিশের সামনেই মাদক বিক্রি প্রসঙ্গে ইয়াবা বিক্রেতা সালুর ভাষ্য, ‘এইহানে হ্যারা কিছুই কইবো না, পতিদিনই হ্যাগো ট্যাকা দেই মামা। আপনের কয়ডা লাগব নিয়া যান, কেউ কিচ্ছু কইবো না। আর কুন জায়গায় আপনি এই সুযুগ পাইবেন না’।
অভিযোগ রয়েছে, নিউমার্কেটের সামনের এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি করছেন নারী-পুরুষ মিলে আট থেকে দশজন। তারা মূলত বেতনভুক্ত কর্মচারী। তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে খুশি ও রনি নামে দু’জনের হাতে। রনি-খুশির হয়ে মাদক বিক্রি করেন কালু, বুলেট, বিউটি, সালু, রাকিব, শাহিদাসহ আরো কয়েকজন।
তাদের মধ্যে ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সালু ও বিউটিসহ আরো দু’জন যাদের নাম জানা যায়নি। বাকিরা গাঁজা ও চরস বিক্রি করেন। তবে বিউটিকে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে নিউমার্কেট থানা পুলিশ আটক করেছে বলে জানা গেছে।
নিউমার্কেট থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য অবৈধ এ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। যারা দিন ভাগ করে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা তুলছেন। এসব পুলিশ সদস্যরা প্রতিদিন মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে দশ থেকে পনের হাজার করে টাকা নিচ্ছেন।
পুলিশের বখরা নেওয়া প্রসঙ্গে পোস্ট অফিসের সামনে অপর এক মাদক বিক্রেতা বলেন, ‘একেকটা দারোগারে সাপ্তায় দেয়া লাগে পাঁচ হাজার ট্যাকা। আবার ওসির বডিগার্ড আইয়া নিয়া যান পনের হাজার ট্যাকা। একেক দিন একেকজন আহে, মোট দশ-বারজনতো অইবোই’।
মাদক বিক্রেতাদের অভিযোগ, টাকা দেওয়ার পরিমাণ কম হলেই বা টাকা দিতে গড়িমসি করলে এসব মাদক বিক্রেতাদের ধরে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তবে আদালতে পাঠানোর সময় উদ্ধার হওয়া মাদকের পরিমাণ কম দেখানোয় সহজেই জামিনে বের হয়ে আসে এবং আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করেন আটককৃতরা।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াসির আরাফাত এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, মাদক নির্মূলে থানার আওতাধীন এলাকায় নিয়মিতই অভিযান পরিচালনা করা হয়। মাদক ব্যবসায়ীদের পাওয়া গেলেই ধরা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়াসহ মামলা করা হয়। তবে অনেক সময় দেখা যায় তারা জামিনে বের হয়ে এসে আবারও মাদক বিক্রি শুরু করেন।
পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এইচআর/জেডএস/এএসআর