ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কম্বল পেয়ে কেঁদে ফেললেন সালমা বেগম

রূপক আইচ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
কম্বল পেয়ে কেঁদে ফেললেন সালমা বেগম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাগুরা: নুরু মোল্লা ও তার স্ত্রী সালমা বেগমের মতো মানুষের কাছে রাত ১১টা মানে রীতিমতো গভীর রাত! বাওড় পাড়ের সহজ সরল এসব খেটে খাওয়া মানুষের কাছে সংসার আর কাজের বাইরে তেমন কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।

সারাদিন ভ্যান চালিয়ে আর সংসারের কাজ সেরে নুরু ও তার স্ত্রী শত খাটাখাটুনির পরও যখন শীতের দিনে একটি কম্বল জোটে না, তখন নেহায়েতই সৃষ্টিকর্তার হাতে ভাগ্য সপে দিয়েই পরিবার নিয়ে ঘুম দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।



এমন পরিস্থিতিতে মাগুরা সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের একটি ভাঙা কুটিরের বাসিন্দা নুরু মিয়ার বাড়িতে রোববার দিনগত রাত ১১টায় শীতবস্ত্র নিয়ে হাজির হন মাগুরার জেলা প্রশাসক মুহ. মাহবুবর রহমান ও তার সঙ্গীরা। প্রথমে যখন বাড়িতে বাড়িতে  গিয়ে পাটকাঠির বেড়ায় শব্দ করে বাড়ির মানুষদের ডাকা হয়।

পুলিশ কিংবা ডাকাতদের ভয়ে অনেকেই তখন মুখ খুলছিলেন না। স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে ডেকে ওঠানোর পর জেলা প্রশাসকের হাত থেকে একটি কম্বল পেয়ে হাসবেন না কাঁদবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তারা।

এক সময় আবেগ ধরে রাখতে না পেরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন সালমা বেগম। একে একে প্রায় ৫০ জন দরিদ্র মানুষের শরীরে কম্বল জড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক কয়েকজন হতদরিদ্র মানুষকে তাদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে নগদ অর্থ সহায়তা দেন কয়েকজন দরিদ্র নারীকে।

জেলা প্রশাসকের হাত থেকে কম্বল পেয়ে তারা যেন পৌষে পেল বসন্তের মিষ্টি পরশ। মধ্যরাত পর্যন্ত কম্বল বিতরণ শেষে শহরে ফিরে সবার মধ্যেই ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি।

রোববার(২১ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলা এ কম্বল বিতরণে আরও উপস্থিত ছিলেন মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খোন্দকার আজিম আহমেদ, এনডিসি রবিউল হাসান, এলজিএসপির কো অর্ডিনেটর মো. শাসমুজ্জোহা, সদর উপজেলা পিআইও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, বাংলানিউজের মাগুরা ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট রূপক আইচ প্রমুখ।  

মাগুরার জেলা প্রশাসক মুহ. মাহবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন- দেশের একটি মানুষও যেন শীতে কষ্ট না পায় এজন্য সরকারিভাবে এ কম্বল বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা শহরের পাশের বস্তিগুলোর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের গরীব মানুষদেরও কম্বল দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আর রাতে বের হতে পারলে সত্যিকারের প্রাপ্য যারা তাদের খুঁজে পাওয়া যায়।

অপ্রত্যাশিতভাবে একটি কম্বল হাতে পেয়ে ওই গ্রামের রাজ্জাক মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় কোনোদিনই এ ধরনের কম্বল বিতরণ করা হয়নি। আর বাড়ির ওপর স্বয়ং ডিসি সাহেব এসে কম্বল দিয়ে যাবেন। এটা আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি।   

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।