ঢাকা: রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার চার্জশিট আমলে গ্রহণ করে পলাতক ২৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আসামিদের মালামাল ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিনের আদালত।
আগামী ২৭ জানুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে গত ৮ জুলাই ইমারত আইনের মামলার চার্জশিট আমলে নিয়ে এ মামলায় পলাতক ৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
গত ১ জুন রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে পৃথক দু’টি চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র এএসপি বিজয় কৃষ্ণ কর।
দুই মামলার দুই চার্জশিটে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও তার বাবা-মাসহ মোট ৪২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে দণ্ডবিধির মামলায় ৪১ জন ও ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জন আসামি হয়েছেন।
মাহবুবুল আলম নামক একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীকে দণ্ডবিধির মামলায় আসামি করা হয়নি। ফলে দু’টি মামলা মিলিয়ে আসামি হয়েছেন মোট ৪২ জন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক ও মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার মেয়র আলহাজ রেফাত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, নিউওয়েব স্টাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার কামাল, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. মধু, অনিল দাস, মো. শাহ আলম ওরফে মিঠু, মো. আবুল হাসান, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সাবেক উপ-প্রধান পরিদর্শক মো. আব্দুস সামাদ, উপ-প্রধান পরিদর্শক মো. জামশেদুর রহমান, উপ-প্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, পরিদর্শক প্রকৌশল মো. ইউসুফ আলী, মো. শহিদুল ইসলাম, ইমারত পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন, ইথার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, মো. শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মো. আতাউর রহমান, মো. আব্দুস সালাম, বিদ্যুৎ মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, রেজাউল ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটার, মো. আব্দুল হামিদ, আব্দুল মজিদ, মো. আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, মো. ইউসুফ আলী, তসলিম ও মাহবুবুল আলম।
আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন সোহেল রানা। জামিনে রয়েছেন ১৬ জন এবং ২৪ জন পলাতক আছেন।
হত্যা মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ভবনে ফাটল থাকায় যেকোনো সময় তা ধসে মৃত্যু হতে পারে জেনেও ওইদিন শ্রমিকদের বাধ্য করা হয়েছিল ভবনে প্রবেশ করতে। আর তারই ফলশ্রুতিতে ভবন ধসে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে নয়তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়লে ১ হাজার ১৩৬ জন মারা যান। আহত হন ১ হাজার ৫শ’ ২৪ জন।
ভবন ধসে প্রাণহানির এ ঘটনায় সে সময় 'অবহেলাজনিত মৃত্যুর' অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। ওই মামলার এজাহারে সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়। তবে অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
ইমারত বিধি মেনে রানা প্লাজা নির্মাণ করা হয়নি- এমন অভিযোগে রানাসহ ১৩ জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ। এ মামলার অভিযোগপত্রে রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমআই/এএসআর