কমলাপুর স্টেশন থেকে: অবশেষে একসাথে জানা গেলো অনেক তথ্য। প্ল্যাটফর্ম মাস্টার শফিক (পুরোনামটি জানাই গেলো না) মূলত একজন গার্ড।
জানা গেল, খুলনার উদ্দেশ্যে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা সেটি বিলম্ব হচ্ছে। আর তা ছাড়ার নতুন সম্ভাব্য সময় সকাল ৯টা ৫০ মিনিট।
সাড়ে তিন ঘণ্টা বিলম্বের এই তথ্য জানার পর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত কয়েকশ' যাত্রীর চোখে-মুখে স্বস্তির ভাবটাই ফুটে উঠলো। কারণ দেড় ঘণ্টা আগে সূর্য ওঠারও আগে স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে তাদের প্রাথমিক উদ্বেগ ট্রেনের সময় নিয়ে হলেও, পরের দিকে আসলে কেবলই জানতে চাওয়া, কখন জানা যাবে, ট্রেন আসতে বিলম্ব কত।
বিলম্বের কথা জানতে এত কেন বিলম্ব? সে প্রশ্নের উত্তর গার্ড শফিকের কাঁধে প্ল্যাটফর্ম মাস্টারের দায়িত্ব। তবে কমলাপুর রেলস্টেশনে মঙ্গলবার সকালে এই প্ল্যাটফর্ম মাস্টারের কক্ষটি ছিল বেশ আকর্ষণের।
ভেতরে জনৈক ঘুমাচ্ছেন। মাস্টারের আসন ফাঁকা। তবে নিশ্চিত হওয়া গেলো যিনি ঘুমাচ্ছেন তিনি মাস্টার নন।
সোয়া সাতটার দিকে ঘুম ভাঙলো তার। প্ল্যাটফর্ম মাস্টারের কথা জানতে চাইলে, সকালের ঘুমভাঙা মুখটিতেই রাজ্যের বিরক্তি ফুটে উঠলো। হতে পারে এত মানুষের আনাগোনায় ঘুমটি বড় অসময়ে ভাঙলো।
'এত অস্থির কেন হচ্ছেন, ট্রেন লেট হবে। '
কিন্ত কেন? সে উত্তর প্ল্যাটফর্ম মাস্টার ছাড়া কেউ জানেন না।
এরই মধ্যে মাস্টারের কক্ষে আরেকজন ঢুকলেন। রেলের ব্যাজ গলায় ঝোলানো। মাথায় বাহারি টুপি। কেউ কেউ তাকে প্ল্যাটফর্ম মাস্টার বলেই ভেবে নিলেন।
এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলে, বোঝা গেলো এই মুহূর্তে তার মতো ব্যস্ত লোকটি আর কেউ নন। হন্তদন্ত হয়ে ছুটলেন আর জানালেন, সব তথ্য দেওয়া আছে ডিজিটাল বোর্ডে।
সকাল থেকে ওই বোর্ডের দিকে তাকিয়ে কোনো কূল কিনারা না পেয়েই, এত উদ্বেগ। বোর্ডে তখনও ঝুলছে, সুন্দরবন এক্সপ্রেস পৌঁছার সময় ভোর ৫টা ৪০ মিনিট, ছাড়ার সময় ৬টা ২০ মিনিট। যে তথ্য যাত্রীদের জানা আছে আরো আগে থেকেই, টিকিট কেনার সময়ে।
এই ডিজিটাল বোর্ড সম্পর্কে তথ্য নিতে একটু চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হলো। কারণ এটি যেখান থেকে কন্ট্রোল করা হয়, সেখানে পৌঁছানো যাবে না। পারমিশন লাগবে।
সেতো লাগবেই। কিন্ত পারমিশন দেবে কে? সে প্রশ্নের জবাবে জানা গেলো ১০টার আগে হবে না।
বেশতো সমস্যা সকাল ৭টার আর দেখা করার পারমিশন মিলবে সকাল ১০টায়।
তবে অপেক্ষার প্রহর এবার শেষ হলো। ডিজিটাল বোর্ডেই ভেসে উঠলো তথ্য, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়ার সম্ভাব্য সময় সকাল ৯টা ৪০ মিনিট।
'তাও আবার সম্ভাব্য!' একজন যাত্রীর উদ্বেগজনক মন্তব্য।
আর অন্যযাত্রীর বিজ্ঞ মন্তব্যটি ছিলো, 'আরে ট্রেন বিলম্বের কথা জানতেই এত বিলম্ব, ট্রেনতো বিলম্ব হবেই। '
অনেক চেষ্টা করেও ঠিক কি কারণে ট্রেন বিলম্ব তা জানা গেল না, তবে তথ্য পেতে বিলম্ব, কারণ এরা সবাই ব্যস্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমএমকে