ঢাকা: বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধে আইনের কড়াকড়ি ও মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় দেখতে চান ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে স্কলাস্টিকা স্কুলের উত্তরা শাখায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ রেহানার সন্তান টিউলিপ সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, ইংল্যান্ডেও এক সময় বাল্যবিবাহের সমস্যা ছিল। এখন সেভাবে নাই। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধে কিছু আইন থাকা উচিৎ। কিছু আইন আছে আমি জানি, আরও কিছু আইন থাকা উচিত।
আমরা যদি মেয়েদের পড়ালেখা না শেখাই, রোল মডেল না দেখাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে না পাঠাই, তাহলে অবস্থার উন্নতি হবে না- যোগ করেন টিউলিপ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনই নয়:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবেন কি না এখনও নিশ্চিত নন বলেও জানান টিউলিপ।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ সংসদ সদস্য বলেন, ভবিষ্যতে কী হবে বলা যায় না। দেখি, কী করি। লেবার পার্টির কী অবস্থা হয়- দেখি। মানুষকে সাহায্য করা যায়, সব জায়গায়। সেখানে বসেও আমি বাংলাদেশিদের সহায্য করছি। কিছুদিন আগে আমাদের বেশ ঝামেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা চিঠি লিখছি। পাঁচ বছর পরে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবো বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়াবো কি না।
নারী-পুরুষ নয়, প্রধানমন্ত্রী হবেন দেশপ্রেমিক:
নারী-পুরুষ বিবেচনা না করে প্রধানমন্ত্রী পদে দেশপ্রেমী কেউ থাকা জরুরি বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধুর এই নাতনি।
এক প্রশ্নের জবাবে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে হোক, পুরুষ বা নারী; দেশকে যে ভালোবাসে, গরিবদের যে ভালোবাসে সেটাই জরুরি। দেশকে ভালোবাসে কি না তা দেখতে হবে।
ব্রিটিশ সংসদে ৬৫০ এমপির মধ্যে মাত্র ১৬০ জন নারী। আমি সেখানে বলেছি, সংসদে নারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে বরং ভালো, প্রধানমন্ত্রী একজন
নারী। এটা নিয়ে আমি গর্বিত। দরিদ্রদের জীবন যেন উন্নত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে যে, তেমন মানুষই প্রধানমন্ত্রী হবেন- বলেন টিউলিপ।
বঙ্গবন্ধুর কারণে রাজনীতিতে আগ্রহী:
রাজনীতিতে আগ্রহী হওয়া কারণ জানাতে টিউলিপ বলেন, আমি যে বাসায় বড় হয়েছি, যেখানে আমার ছোটবেলা কেটেছে, সেখানে সারাজীবন নানা (বঙ্গবন্ধু) ও যুদ্ধের গল্প শুনেছি। নানাকে কখনও আমি দেখিনি। কিন্তু শুনেছি, দেশ স্বাধীনে তিনি কী কী কাজ করেছেন। মা, খালা সবসময় নাস্তার টেবিলে, খাওয়ার টেবিলে এসব বলতেন, আলোচনা করতেন- কী করা যায় দেশের জন্য। এসব কারণেই আমি রাজনীতিতে আগ্রহী হয়েছি।
এখানেও রাজনীতি করতে পারতাম, কিন্তু ভাবলাম, লন্ডনে আমার জন্ম, বড় হয়েছি। রাজনীতি মানুষের সাহায্যের জন্য। সেখানেও সেটা করতে পারি।
এদেশের নারীরা প্রেরণা যোগায়:
বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন শীর্ষস্থানে পৌঁছেছেন দেখে অনুপ্রাণিত হন বলেও জানান টিউলিপ।
‘আমার খালা আমার রোল মডেল। লন্ডনে জন্ম, বড় হয়েছি। রাজনীতি মানুষকে সাহায্য করার জন্য, সেটা যে দেশের জন্যই হোক। মা-খালা আমার রোল মডেল। এছাড়া স্পিকার, এমপি তারানা, ওয়াসফিয়া নাজরীন- এরা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে’- বলেন তিনি।
টিউলিপ বলেন, দেশে এসে খুব ভালো লাগছে। নির্বাচনে অনেক কষ্ট। ক্যাম্পেইনে দুই বছরের কাজ করেছি। দরজায় দরজায় গিয়েছি। লেবার পার্টি কিন্তু জেতেনি, খারাপ করেছে, আমরা খুব কেঁদেছি। আমি যে আসনে জিতেছি, সেটা আগের বারও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল’- বলেন তিনি।
বাংলাদেশিরা চেয়েছিলেন এমপি হই:
টিউলিপ বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত। ওখানে যারা বাংলাদেশি, তারা সবাই চেয়েছেন, ব্রিটেনে বাংলাদেশি এমপি হোক।
বাংলাদেশিদের জন্য কাজ করতে চাই:
‘আমি একা নই, রুশনারা ও রুপা আপা আছেন এমপি। একসময় আমাদের ওখানে অনেক বৈষম্য ছিল। বাসা ভাড়া, স্কুলে ভর্তিতে সমস্যা ছিল। এখন কিছুটা কমেছে। বাসা নিয়ে বাংলাদেশিরা খুব ঝামেলা পোহান। অনেক দামি বাসা। পছন্দমতো পাওয়া যায় না। চাকরি পেতেও সমস্যা। তবে এ সমস্যাটি শুধু বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে নয়, সার্বিকভাবেই চাকরি পেতে সমস্যা হচ্ছে। আমি সবার জন্য কাজ করতে চাই’- টিউলিপ সিদ্দিক।
চ্যালেঞ্জ অনেক ছিল:
জয় সহজে আসেনি, অনেক প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে জয়ী হয়েছেন বলে জানিয়ে টিউলিপ বলেন, আমার আগে যিনি এ আসনে ছিলেন, তিনি বিখ্যাত অভিনেত্রী, দুইবারের অস্কারজয়ী। তাই আমাকেও জিজ্ঞেস করতো সবাই, তুমি কি কখনো অভিনয় করেছো? আমি বলতাম- না, অভিনয় করিনি।
‘কিছু বাঙালি বলতো- ও যদি নির্বাচন করে, তাহলে শুধু আওয়ামী লীগের কথা বলবে। এসব সমস্যা ছিল। আমি বলেছি, দেখো, আমি বাঙালি, বাঙালিদের জন্য কাজ করবো। কে কোন দল করে সেটা আমার কাছে জরুরি নয়’- বলেন টিউলিপ সিদ্দিক।
মুসলমানদের জন্য কাজ করবেন টিউলিপ:
ব্রিটেনের মুসলমান নাগরিকরা যেন সমস্যায় না পড়ে, তা নিয়ে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।
মেয়েদের আত্মবিশ্বাস কম:
তরুণ মেয়েদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কথা তুলে ধরে টিউলিপ বলেন, ‘যখন তরুণ মেয়েদের সঙ্গে কথা বলি, দেখি তাদের আত্মবিশ্বাস কম। এটা সমস্যা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ব্রিটেনের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও বলে, ভয় লাগে, মা-বাবা সাপোর্ট দেয় না, শিক্ষকরা সাপোর্ট দেয় না।
তবে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্রিটেনে নারী সাংবাদিক কম। এখন হচ্ছে। এক সময় সেখানে মিডিয়ায় নারীদের কাভারেজ দিতে চাইত না। এখন দেয়।
মেয়েদের প্রেরণা যোগাতে এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও আয়োজনের ইচ্ছা পোষণ করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই এমপি বলেন, এখানে এই প্রথম এমন অনুষ্ঠান করলাম, অন্য স্কুল করতে চাইলে আমরা আরও এমন অনুষ্ঠান করবো। এতে আমাদের মেয়েরা যদি উৎসাহ পায়, সেটাই চাই।
টিউলিপের স্বামী ক্রিস পার্সি, সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
এসকেএস/এমজেএফ
** নানা ও যুদ্ধের গল্প শুনে বড় হয়েছি
** যার যা ভালো লাগে, তা করো, তা পড়ো