ঢাকা: ‘যে কেউ অতি সাধারণভাবেই পাসপোর্ট বই পেতে পারেন। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) পেতে কোনো জটিলতা নেই।
‘কেননা পাসপোর্ট বই তৈরি হতে একটা প্রসেস বা প্রক্রিয়া আছে। সামান্য কিছু সময় লাগে। তবে জরুরি ব্যবস্থাও আছে’।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে নিজ কক্ষে বাংলানিউজকে কথাগুলো বললেন বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সদ্য নিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান।
গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) প্রজ্ঞাপন জারি করে ইন্ট্রোডাকশন অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) অ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পদ থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদকে মহাপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। একই অধিদফতরে সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) তিনি মহাপরিচালক হিসেবে কাজে যোগদান করেন।
মাসুদ রেজওয়ান জানান, তাদের এমআরপি ও এমআরভি প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক এন এম জিয়াউল আলমকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে সচিবালয়ে বদলি করা হয়।
এ নতুন ডিজি জানান, পাসপোর্ট আবেদনকারীর নাম-ধামসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে প্রতিদিন ১৬/১৭ হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডেলিভারির নির্ধারিত দিনে সবাই তাদের পাসপোর্ট নিতে আসেন না। দেখা যায়- কোনোদিন ১৬ হাজার পাসপোর্ট ডেলিভারি হয় আর কোনদিন হয়তো ১০ হাজার বা তারও কম।
মাসুদ রেজওয়ান জানান, বিশ্বের ৬২টি দেশে পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণ করে সেসব দেশ থেকেই আবেদনকারীকে বই হস্তান্তর করা হয়। ঢাকার আগারগাঁও ও যাত্রাবাড়ীসহ দেশের ৬৩টি জেলায় আবেদন গ্রহণ ও বিতরণ করা হয়।
তিনি বলেন, জেলা ও বিদেশ থেকে আসা আবেদন ফরম দেখে নাম-ধামসহ পাসপোর্ট বই প্রিন্ট করা হয়। এরপর বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের বই ডিপ্লোম্যাট ব্যাগে পাঠানো হয়। দেশের পাসপোর্টগুলো পাঠানো হয় ডাক বিভাগের মাধ্যমে স্ব স্ব জেলার পাসপোর্ট অফিসে।
প্রতিদিন ১৬/১৭ হাজার পাসপোর্টে নাম অন্তর্ভুক্ত করে তিনটি মেশিনের মাধ্যমে প্রিন্ট করা হয়। এখনকার পাসপোর্ট বই আনা হয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে।
আস্থার সঙ্গে তিনি বলেন, এখন এ অফিস সিংহভাগ দালালমুক্ত। তাদের সে দাপট আর নেই। তবে এখন দালাল নেই, তা পুরোপুরি বলা যাবে না। তারা চুপিসারে তাদের কাজ সারেন। আমরা দেখলেই তাদের আটক করে আইন রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে নেই।
বুধবার সরেজমিনে গিয়েও আগের মতো আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে দালাল চোখে পড়েনি। অথচ আগে হাত বাড়ানোর আগেই মিলতো দালাল। সেখানে যাওয়ার পথের আগেই ছেঁকে ধরতেন দালালেরা।
নতুন ডিজির কথার প্রমাণ মিলল যাওয়া ও বের হওয়ার পর।
পাসপোর্ট অফিসে নাম না প্রকাশের শর্তে একজন সহকারী পরিচালক জানালেন, অনলাইনে ফরম ফিল-আপের আগে নির্ধারিত ব্যাংকে যথাযথ টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিতে হবে।
এরপর অনলাইনে ফরম ফিল-আপের সময় টাকা জমার রশিদ নম্বর উল্লেখ করে ফরমটি ফিল-আপ করার পর প্রিন্টআউট নিতে হবে।
এমআরপি তথ্য কেবল সীমান্তে থাকা কম্পিউটার পড়া যায়। যা চোখে ধরা পড়ে না। চার পৃষ্ঠার এ আবেদনপত্রে আবেদনকারীকে নাম, বাবার নাম, মাতার নাম, তাদের পেশা, জাতীয়তা, জন্মস্থান, জন্ম তারিখ, জন্ম সনদপত্র নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে হয়।
আবেদনকারীকে একটি ৫৫ × ৪৫ মিলিমিটার আকারের রঙিন ছবি (পাসপোর্ট সাইজ ছবি) ফরমে আঠা দিয়ে লাগানোর পর সত্যায়িত করতে হবে। ছবিটি এমনভাবে সত্যায়িত করতে হবে যেন সত্যায়নকারীর স্বাক্ষর এবং সিলমোহরের অর্ধেক অংশ ছবির ওপর আর বাকি অর্ধেক অংশ ফরমের কাগজে থাকে।
সত্যায়িত করতে পারবেন-সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর, গেজেটেড কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, বেসরকারি কলেজের শিক্ষক, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, পৌর কাউন্সিলর, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের সপ্তম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এসএস/এএসআর