ঢাকা: পৃথিবীকে পাপ তথা যেকোনো অপরাধ থেকে মুক্ত করতেই অন্ধকারে আলোর উদ্ভাস ঘটেছিল। জন্মেছিলেন যিশু।
পাপমুক্তি, মঙ্গল কামনা, মানবকল্যাণের মধ্য দিয়ে আনন্দ-উদ্দীপনায় বর্ণিল আয়োজনে ২৫ ডিসেম্বর (শুক্রবার) শুভ বড়দিন উদযাপিত হবে। এটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বড়দিন সবার। এই দিনে ঈশ্বর মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে এসেছিলেন। তিনি সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে মিলনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রভু আমাদের পাপ, তাপ, রাহু থেকে মুক্ত করে শান্তি বর্ষিত করবেন। বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারে আনন্দ বয়ে আনবেন- এমনটাই তো প্রত্যাশা।
দুই হাজার চৌদ্দ বছর আগে মানুষকে পাপের আবর্ত থেকে মুক্তি দিতে বর্তমান ফিলিস্তিনের বেথেলহেম নগরীতে একটি গোশালায় কুমারী মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নেন মহান যিশু খ্রিস্ট। এ জন্মতিথিকে উপলক্ষ করে প্রতি বছর আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করেন খ্রিস্টীয় ধর্মমতের অনুসারীরা। দিনটি উপলক্ষে গির্জা ছাড়াও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি বাড়ি চলে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান।
খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, তিনি (যিশু) ঈশ্বরের ছেলে, সারা পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতেই তার আগমন। বড়দিন উদযাপনের অনুষঙ্গ হিসেবে গির্জা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ অনেকের বাড়িতে ‘ক্রিসমাস ট্রি ও গোশালা’ তৈরি করে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে অনেক জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে প্রীতিভোজের। বড়দিনের বিশেষ কেকও রয়েছে অনেকের আয়োজনে।
দিনটি সরকারি ছুটির। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলো বড়দিন উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সংবাদপত্র এবং অনলাইনে বিশেষ নিবন্ধে দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরা হচ্ছে।
নানা আয়োজন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও শুভ বড়দিন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। যার মধ্যে খ্রিস্টজাগ (প্রার্থনা) ছাড়াও থাকছে কীর্তন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিকে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে বড়দিনের ক্রিসমাস ট্রি। ফুলে ফুলে ঢেকে দেওয়া হয়েছে স্বজনদের সমাধিও।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জপমালা গির্জায় খ্রিস্টজাগের (প্রার্থনা) মধ্য দিয়ে বড়দিনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠিত হবে। যাতে অংশ নেবেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী হাজারো মানুষ। তবে বাহারি রং-বেরঙের পোশাকে শিশুদের মধ্যে দেখা দেবে বাড়তি আনন্দ। প্রাথর্নায় দেশ, জাতি, মানবের মঙ্গল ও মিলন কামনা করা হবে।
তাছাড়া প্রতিবারের মতো শিশুদের মধ্যে বড়দিনের বাড়তি আমেজ ছড়িয়ে দিতে গির্জার প্রধান ফটকেই সান্তা ক্লজ বিশেষ উপহার নিয়ে দাঁড়াবেন। ফলে মা-বাবার হাত ধরে আসা শিশু-কিশোরদের মনে চকলেট, ক্যান্ডি পাওয়ার পাশাপাশি সান্তা ক্লজকে পেয়ে বাড়তি আনন্দের উপক্রম হবে- এটাই স্বাভাবিক।
বড়দিনের অন্যতম আনন্দ সান্তা ক্লজ। সান্তা ক্লজ শিশুদের মধ্যে উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দে ভরিয়ে তুলবেন দিনটি।
কাকরাইলের সেন্ট মেরি ক্যাথিড্রাল, লক্ষ্মীবাজার, তেজগাঁও, বনানী, আসাদ গেট, কাফরুলসহ সারাদেশের গির্জায় একই ধরনের সাজসজ্জা করা হয়েছে। এসব গির্জার নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। গির্জার বাইরে ও ভেতরে সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
বড়দিন উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এছাড়া অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিরা বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বড়দিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
আইএ/এএসআর
** উৎসব, প্রার্থনা আর মিলনে হলি রোজারিও চার্চে প্রার্থনা শুরু
** বড়দিনের আগের রাতে উৎসবে উষ্ণ কলকাতা
** প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু