ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাইপে পড়ে মৃত্যুর এক বছর

‘আমি তো মা, জিহাদ আমার নাড়িছেঁড়া ধন..’

আবাদুজ্জামান শিমুল ও শেখ জাহাঙ্গীর আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
‘আমি তো মা, জিহাদ আমার নাড়িছেঁড়া ধন..’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘সারাদিন-রাত চোখের পানি বন্ধ হয় না ভাই, ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। রাতে ঘুম আসে না আমার’ -কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন শিশু জিহাদের মা খাদিজা খাতুন।



পাইপে পড়ে জিহাদের মৃত্যুর এক বছর হতে চলেছে রোববার (২৭ ডিসেম্বর)। দিনটিকে সামনে রেখে সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জিহাদের মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় কাজ করতে করতে ভুলে যাই যে আমার সন্তান জিহাদ বেঁচে নেই। আমার আরও দুই সন্তান আছে- এক ছেলে জিসান ও মেয়ে স্বর্ণা। তারা যতোটা না মা বলে ডাকে, তার চেয়ে বেশিবার জিহাদ ডাকতো। একটু পর পর আম্মা ও আম্মা বলে ডেকে উঠতো। যখন নিচে খেলতে যেতো, তখন মাঝে মাঝে চিৎকার করে ডাকতো, আম্মা ও আম্মা, আমাকে খেলতে নেয় না’।

‘মৃত্যুর কিছুদিন আগ থেকে জিহাদের আম্মা ডাকে পরিবর্তন আসে। তখন থেকেই বলতো, মাগো ও মা ক্ষুধা লেগেছে, ভাত দাও। আম্মা থেকে মাগো বলে ডাকতে শুরু করে। জিহাদের মুখ থেকে মাগো এই মধুর শব্দ শুনে আমি জিজ্ঞাসা করি, বাবা তুমি এই ডাক কার থেকে শিখলা? তখন জিহাদ শুধু হাসতো’- বলতে বলতে ছেলের ছবি হাতে নিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকেন জিহাদের মা খাদিজা।


গত বছরের (২০১৪) ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর শাজাহানপুরে বাসার কাছে রেলওয়ে মাঠে খেলতে খেলতে পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিছানার পাশের বসা ছিলো মৃত জিহাদের ছোট ভাই জিসান (৭)। ওই সময় মায়ের হাতে থাকা জিহাদের তিনটি লেমেনেটিং করা ছবি নিয়ে বিছানার ওপর পাশাপাশি সাজিয়ে বলতে থাকে, ‘এই যে আমার জিহাদ ভাইয়া’।

জিহাদের মা আরো বলেন, ‘ছোট ছেলে জিসান প্রায় সময় জিহাদের ছবিগুলো আমার কাছ থেকে নিয়ে খাটের ওপর রেখে দেখে আর খেলতে থাকে’।

‘জিন্স প্যান্ট আর গেঞ্জি ছিলো জিহাদের পছন্দের পোশাক। শুক্রবার হলেই জিহাদ বলতো, মা গোসল করাইয়া দেও নামাজ পড়তে যামু। দুপুরে কি গরুর মাংস রানসো? বলেও জিজ্ঞাসা করতো’।

জিহাদের মা অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন আর আমাদের খরব কেউ নেন না। ঘটনার পর থেকে সারা বাংলাদেশের মানুষ জিহাদের খোঁজ নিয়েছেন। এখন অনেকেই জিহাদকে ভুলে গেছেন। আমি তো মা, জিহাদ আমার নাড়িছেড়া ধন..। ’


বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫

এজেডএস/এসজেএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।