রাজশাহী: ‘নামাজ পড়ার সময় হঠাৎ ধুম করে পটকা ফুইটা উঠলো। পরে ওষ্ঠা খ্যায়া আরেক জায়গায় গিয়া পইড়লাম।
নৃশংস ওই ঘটনার শিকার হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর বেডে শুয়ে ১২ বছরের শিশু নয়ন ঘটনার বর্ণনা দিলেন এভাবেই।
শুক্রবার দুপুরে বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর চকপাড়া আহমেদিয়া জামে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত তিনজনের মধ্যে রয়েছে এই শিশুটিও।
নৃশংস ওই ঘটনার পর গুরুতর আহতাবস্থায় নয়নকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে জরুরি অস্ত্রোপচার করে তার ডান পায়ের ওপর থেকে স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে।
চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত তার আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না। তাই তার দুরন্ত পায়ের ছোঁয়ায় উড়বে না স্কুলের মাঠের ধূলিকণাগুলোও।
হাসপাতালের বিছানায় বোমার স্প্লিন্টারের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে আছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলাজার মচমইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এই ছাত্র। পাশে রয়েছেন কৃষক বাবা মুকুল হোসেন ও মা নুরুন নাহার বেগম।
কথা বলার সময় নয়ন জানালো- গত শনিবার থেকে ওই মসজিদে নামাজ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছিল। নয়নও সেই শিক্ষা পুরোপুরি নিতে চেয়েছিল। কেবলই সূরা ফালাক শিখেছে। কিন্তু বোমা হামলার ঘটনায় তার সেই ইচ্ছে থমকে গেছে।
নয়ন বললো, 'নামাজ পড়ার সময় হঠাৎ ধুম করে পটকা ফুইটা উঠলো। পরে ওষ্টা খ্যায়া আরেক জায়গায় গিয়া পইড়লাম। তার পর আর কিছু মনে নাই। '
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে দুই বছরের মেয়ে মুন্নিকে কোলে নিয়ে নয়নের মা নুরুন নাহার বেগম ছুটে আসেন হাসপাতালে। ছেলের এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
নয়নের মা নুরুন নাহার বেগম জানান, গত শনিবার থেকে নামাজ শিক্ষার জন্য মসজিদেই পড়ে থাকতো নয়ন। কিন্তু শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ার সময় বোমা হামলার শিকার হয়।
নয়নের বাবা মুকুল হোসেন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি মসজিদে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করে প্রতিবেশীদের সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ওই সময় ছেলে তাকে জানিয়েছে পেছনের কাতারে ছিল নয়ন। আর অপরিচিত ওই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী যুবক ছিল তার সামনের কাতারে। এর আগে কখনও তাকে মসজিদে দেখেনি নয়ন। আকস্মিক ঘটনার পর কিছুটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ছোট্ট এই শিশুটি।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জুমার নামাজের সময় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর চকপাড়া আহমেদিয়া জামে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় নিজেই নিহত হয়েছেন হামলাকারী।
এ সময় আরও ১০ জন আহত হন। এদের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে বর্তমানে তারা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এরা হলেন- বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর চকপাড়া গ্রামের ময়েজ উদ্দিন (৪০), সাহেব আলী (৩৬) ও একই গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে নয়ন (১২)। এর মধ্যে ময়েজ উদ্দিন ও সাহেব আলী পরস্পর চাচাতো ভাই। বাকীদের বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএস/এসএইচ