রাজশাহী: নিহত যুবকই রাজশাহী বাগমারা উপজেলার সৈয়দপুর চকপাড়া আহমেদিয়া মসজিদে বোমা হামলাকারী।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নিহত যুবকের ময়নাতদন্ত শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. এনামুল হক বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে ওই যুবকের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
ডা. এনামুল হক বলেন, ওই যুবক বোমার আঘাতেই মারা গেছেন। কারণ, তার শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ময়নাতদন্তের সময় তার লিভার থেকে চারটি স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে।
বহনকৃত বোমাটি বাম দিকে থাকায় তার শরীরের বাম অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাম হাতও ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সব মিলিয়ে নিহত যুবকই বোমা বহনকারী ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, শনিবারের মধ্যে হামলাকারী যুবকের পরিচয় পাওয়া না গেলে রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে দাফন করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে দিয়ে দেবে পুলিশ।
রামেক এর ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের পর শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমানও বাংলানিউজকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ওসি।
এদিকে, ঘটনার পর র্যাব-৫ এর সদস্যরা মচমইল সৈয়দপুর এলাকার থেকে শহীদুল ও আশরাফ নামের দুই ব্যক্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ঘটনার পর নিখোঁজ হলে পরে তাদের আটকের বিষয়টি র্যাব নিশ্চিত করে বলে জানিয়েছেন আহমেদিয়া মুসলিম জামাতের আঞ্চলিক প্রধান মো. সালাউদ্দিন।
তিনি বলেন, বোমা হামলার পর থেকেই তারা দু’জন নিখোঁজ ছিলেন। তাদের অনেক খোঁজ করে না পেয়ে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তারা আটকের কথা স্বীকার করেন।
রাজশাহী র্যাব-৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আবদুস সালাম জানান, বাগমারা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের দু’জনকে আটক নয়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়। তবে ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই তাদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে, তারা এলেই দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এদিকে, মসজিদে বোমা হামলার ঘটনায় শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে মামলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শনিবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে বাগমারা উপজেলার সৈয়দপুর চকপাড়া আহমেদিয়া মসজিদটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। শুক্রবার মাগরিবের ওয়াক্ত থেকে পুলিশ পাহারায় সেখানে নামাজ আদায় করছেন আহমেদিয়া জামাতের মুসল্লিরা। তবে শুক্রবারের ঘটনার পর ওই এলাকা জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে মসজিদ এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন। তবে কাউকে ভিড়তে দিচ্ছে না পুলিশ।
মসজিদের মধ্যে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাতেই বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাগমারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসহিদ আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় বাগমারা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আবুল কালাম আজাদকে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি মতিয়ার রহমান কিছু জানাতে রাজি হননি। মামলার তদন্ত স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না বলে জানান ওসি।
তবে এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, মামলার তদন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ঘটনার পর সংগ্রহ করা আলামত আজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিআইডির মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে নিহতের পরিচয় শনাক্ত ও এর পেছনে জঙ্গি সংশ্লিষ্টা রয়েছে কী না পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তা খতিয়ে দেখছে। এছাড়া আহমেদিয়া জামাতের ঢাকার নেতৃবৃন্দ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তারা থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান ওসি।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের সময় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর চকপাড়া আহমেদিয়া জামে মসজিদে আত্মঘাতী বোমায় মারা যান হামলাকারী। পরে শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় শিশুসহ আহত তিনজন এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে শিশুটিকে ৯ নম্বর এবং অপর দুই ব্যক্তিকে ২ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তারা আশঙ্কামুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএস/বিএস
** ‘এর আগে কখনও তাকে মসজিদে দেখেনি’