রাজশাহী: আবারও আলোচনায় রাজশাহীর রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত বাগমারা উপজেলা ‘বাগমারা’।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জুমার নামাজের সময় বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর চকপাড়া আহমেদিয়া জামে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে হামলাকারী নিহত হন।
এসময় আহত হন ১০জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুসহ তিনজন।
অতীতে এ উপজেলায় জঙ্গি উত্থান হওয়ায় সঙ্গত কারণেই পুলিশি তদন্তে সন্দেহের তীর জেএমবির দিকে। নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির সদস্যদের টার্গেট করেই এখন এগুচ্ছে তদন্ত। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সংগঠনটির সংশ্লিষ্টতার নানান কারণ।
তবে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় মামলার তদন্ত নিয়ে কিছুট খাবি খাচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা।
মসজিদে ঢোকার সময় হামলাকারী যুবক নিজেকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং তার বাড়ি মোহনপুর বললেও খোঁজ-খবর নিয়ে তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, বাগমারা অঞ্চলে এক সময় জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) কর্মকাণ্ড ছিল। জেএমবি’র অধিকাংশ সদস্যরাই বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হন। তবে পরিবর্তীতে নির্দোষ প্রমাণ করে আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় অনেকেই জমিন নিয়ে এলাকায় অবস্থান করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রেখেই সৈয়দপুর আহমেদিয়া জামে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনার তদন্ত চলছে।
এদিকে তাদের উপর হামলা হতে পারে- এমন তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার হাটবার থাকায় তারা অপরিচিত ওই যুবককে সন্দেহের আওতায় আনতে পারেন নি। নামাজ শেষে পরিচয় জানতে চাইবেন, ভেবেছিলেন। কিন্তু তার আগেই সব ঘটে যায়, বলেন বাগমারার সৈয়দপুর আহমেদিয়া মুসলিম জামাতের (কাদিয়ানি সম্প্রদায়) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বোমা বিস্ফোরণের পর ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের মানুষ দিকবিদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। আর মসজিদের ভেতরের মুসল্লিদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠে বাতাস।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগমারা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি/তদন্ত) আবুল কালাম আযাদ জানান, যে বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সেটি “সকেটবোমা”। লোকালি তৈরি করা। লোহার পাইপ কেটে তৈরি করা হয় এগুলো। তাতে বিদ্যুতের তারও ছিল। এছাড়া ছোট ছোট লোহার টুকরা ও মারবেল পাওয়া গেছে। এসব দেশীয় উপকরণ। জঙ্গিরা এই বোমাকে দেশি হ্যান্ডগ্রেনেড বলে থাকে। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহকৃত বোমার আলামত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল উত্থান ঘটে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি)। ওই সময় এই জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব দেয় জেএমবির সামরিক কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাই। তার নেতৃত্বে বাগমারা, নওগাঁ এবং আত্রাইসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় দুই মাস জুড়ে প্রকাশ্যেই চলে বিভৎস্য নৃশংসতা।
দুই মাসে ২২ জনকে হত্যা করা হয়। এর প্রায় ১১ বছর পর শান্ত বাগমারায় আবারও আত্মঘাতী বোমা হামলা।
নিহত হামলাকারীর ময়নাতদন্ত শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. এনামুল হক বলেন, নিহত যুবকের লিভার থেকে চারটি স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে।
এর মধ্যে তিনটি লোহা ও একটি স্টিলের বল রয়েছে। বহনকৃত বোমাটি পেটের বাম দিকে থাকায় তার শরীরের বাম অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাম হাতও ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সব মিলিয়ে নিহত যুবকই বোমা বহনকারী ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএস/এটি
** বাগমারায় মসজিদে আত্মঘাতী বোমায় হামলাকারী নিহত
** বাগমারায় মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় মামলা
** আজান শেষে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে হামলাকারী
** ‘আগে টের প্যাইলে ধইরা ফেলতু’