ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা-২০১৫

পূর্বাঞ্চল ট্রেনের শিডিউলে হ-য-ব-র-ল

মাসুক হৃদয়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
পূর্বাঞ্চল ট্রেনের শিডিউলে হ-য-ব-র-ল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে গত এক বছরে একের পর এক ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।

এতে পূর্বাঞ্চল রেলপথে ট্রেনের শিডিউল অনেকটাই লাটে ওঠে।

দেখা দেয় হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

ঘন ঘন শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় বছরজুড়েই দুর্ভোগ পোহান এসব ‍রুটের ট্রেন যাত্রীরা।

তবে আলোচিত এসব দুর্ঘটনার কোনো কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পায়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এসব দুর্ঘটনাকে স্রেফ ‘রেললাইনের ত্রুটি’ বলে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়া দৃশ্যত আর কোনো ‍অর্জন নেই কর্তৃপক্ষের।

বিদায়ী বছরে এ রুটে ১০টি ট্রেন লাইনচ্যুতিসহ মোট ১৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনা-১
বছরের শুরুতে ২৫ জানুয়ারি দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পাঘাচং রেলস্টেশনের কাছে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়।

দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে সিলেট, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর রেল যোগাযোগ প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এতে প্রায় ৩০০ ফুট রেলপথ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।   এরপর স্থায়ীভাবে ওই রেলপথটি মেরামত করতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে।

দুর্ঘটনা-২
৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন এলাকায় চট্টগ্রামগামী নাসিরাবাদ ট্রেনের ১টি বগির ৪টি চাকা লাইনচ্যুত হয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রেললাইন মেরামত শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

দুর্ঘটনা-৩
১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন আউটারের পুনিয়াউট রেলগেট এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন ও ২টি বগি লাইনচ্যুত হয়।

ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনের কয়েকটি চাকা রেলট্র্যাক থেকে  নেমে পাশের রিটার্নিং ওয়ালের কাছে চলে আসে। উদ্ধার কাজ শেষে সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১২টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

দুর্ঘটনা-৪
১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আশুগঞ্জ রেলস্টেশন আউটার সিগন্যালের কাছে রেললাইন বাঁকা হয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে এমনটি হয়েছে বলে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ জানায়।

দুর্ঘটনা-৫
১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আশুগঞ্জের তালশহর রেলস্টেশনের অদূরে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এতে আপলাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

দুর্ঘটনা-৬
পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বড়হরণ এলাকায় ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আপলাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুর্ঘটনা-৭
৫ মার্চ বেলা পৌনে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের আউটারের পুনিয়াউট রেলক্রসিং এলাকায় নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকে। বগিগুলোর চাকা রেলট্র্যাক থেকে নেমে সামান্য হেলে পড়ে।

দুর্ঘটনা-৮
৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘর ও কসবা উপজেলার মন্দভাগ রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে। এতে সিলেট, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

দুর্ঘটনা-৯
১৮ এপ্রিল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পাঘাচং-চাঁন্দপুর এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কনটেইনার ট্রেনের ১টি বগির ৪টি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এতে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম-সিলেট ও নোয়াখালীর রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

দুর্ঘটনা-১০
৪ জুন বিকেল ৩টার দিকে আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশনের কাছে গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

দুর্ঘটনা-১১
৩০ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে কসবা উপজেলার মন্দভাগ রেলস্টেশনের কাছে কনটেইনার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এতে ১টি বগির ২টি চাকা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

দুর্ঘটনা-১২
৩ সেপ্টেম্বর বেলা পৌনে ১১টার দিকে আখাউড়া জংশন স্টেশন আউটারের বড়বাজার রেলগেট এলাকায় ঢাকা অভিমুখী একটি কন্টেইনার ট্রেনের ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেল  যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

দুর্ঘটনা-১৩
সর্বশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর বেলা সোয়া ১১টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর রেলস্টেশনের কাছে পণ্যবাহী কন্টেইনার ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। এতে প্রায় ৭ ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।

এসব দুর্ঘটনার পর এ পথে চলাচলকারী যাত্রী ও মালবাহী আপ এবং ডাউন লাইন মিলিয়ে মোট ৫৮ থেকে ৬০টি ট্রেনের সময়সূচিতে মারাত্মক বির্পযয় দেখা দেয়।

ঘন ঘন ট্রেন লাইনচ্যুতির ফলে শিডিউল বিপর্যয় প্রসঙ্গে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের লোকোশেড ইনচার্জ এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, তখনকার সময় (বছরের শুরুর দিকে) রেললাইনের অবস্থা নাজুক ছিল। প্রতি মাসেই ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটতো। এখন মেরামতের ফলে এ লাইনের অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই রেল লাইনচ্যুতি ও দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে গেছে।   

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এসআর/এএসআর

** আলোচনায় ফেসবুক-বায়োমেট্রিক, টেলিকমে আলোর রেখা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।