ঢাকা: রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সংগ্রামের ইতিহাস চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ‘সোনার খনি’ বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সেইসঙ্গে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, হাজার বছরের সামাজিক ঐতিহাসিক কৃষ্টিও চলচ্চিত্র নির্মাণের একেকটি ‘সোনার খনি’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে চলচ্চিত্রে সন্ত্রাস, নৃশংসতা, বীভৎসতা ও অশ্লীলতা রোধে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালকবৃন্দের মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করছিলেন তথ্যমন্ত্রী।
হাসানুল হক ইনু বলেন, একটা জায়গায় সেন্সর বোর্ডকে এসে আটকাতে হয়, সেখানে আর ছাড় দেওয়া যায় না। নকল, নৃশংসতা, বীভৎসতা, অশ্লীলতা-এগুলো চলচ্চিত্রের প্রধান উপজীব্য বিষয় হতে পারে না। আমি বলবো যৌন ছবি ছলচ্চিত্র নয়, অশ্লীলতা, সন্ত্রাস, বীভৎসতা, নকল- এগুলো সমাজের বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এগুলোকে কেন্দ্র করে ডকুমেন্টরি চলচ্চিত্র নয়।
‘সমাজের বিচ্ছিন্ন খারাপ প্রবণতাকে প্রতিরোধ করার জন্য অশ্লীলতা, নৃশংসতা, জঙ্গিবাদের ঘটনা চলচ্চিত্রে দিয়ে দেবেন, সেটা হয় না। ’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্রের পুনরুজ্জীবনের ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, হাজার বছরের সামাজিক ঐতিহাসিক কৃষ্টি এবং গণতান্ত্রিক, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ চলচিত্রের নির্মাণের জন্য সোনার খনি।
‘মুক্তিযুদ্ধ আরেকটা সোনার খনি এবং মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাংষ্কৃতির জগতে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম আরেকটা সোনার খনি। রাজাকার সমর্থিত, যুদ্ধাপরাধী সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সংগ্রাম আরেক সোনার খনি। ভাষা আন্দোলন আরেকটা সোনার খনি। ’
‘সুতরাং ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক সরকারের উচ্ছেদের সংগ্রাম এবং রাজাকার সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার যে মহাসংগ্রাম- এসব কিছুই একেকটা সোনার খনি। ’
প্রযোজক-পরিচালকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এতোগুলো সোনার খনি থেকে আপনি আপনার চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন, সোনার খনি থেকে হীরা, মুক্তা, আহরণ করবেন এবং চলচ্চিত্র জগতে সেটা পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে জনগণকে মানবিক, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দীক্ষায় দীক্ষিত ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য চলচ্চিত্র ভূমিকা রাখবে, সেটাই কামনা করি।
চলচ্চিত্রে যৌনতা বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিনেমা হলে বলে দেওয়া হয় ১৮ বছরের নিচে নয়, টেলিভিশনে সবাই একসঙ্গে চলচ্চিত্র দেখে। ৩ বছরের শিশু থেকে শত বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত একসঙ্গে চলচ্চিত্র দেখে। সুতরাং এখানে চলচ্চিত্র সবার জন্য উন্মুক্ত, সে কারণে সেন্সর বোর্ড সেন্সর দিলেও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ সেই ছবি নাও দেখাতে পারে। কারণ এটা সবার জন্য উন্মুক্ত।
‘থ্রি-এক্স বা টু-এক্স ছবি টেলিভিশন উইল নট অ্যালাও। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে বয়স্কদের জন্য দেখিয়ে দিতে পারে। ’
মানুষের একটু খারাপ কাজ করার প্রবণতা আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেই খারাপ কাজ নিবৃত করার জন্য নির্বাহী কর্তৃপক্ষ ও আদালত রয়েছে। সেন্সর বোর্ড শাসন করছে না, দুষ্ট প্রকৃতির লোকজনকে নিবৃত করার জন্য সেন্সর বোর্ড। সে দিক থেকে সেন্সর বোর্ড ভাল চিত্র নির্মাতাদের ভাল বন্ধু, শত্রু-মিত্রের ব্যাপার না। কারণ আইনের ফর্মায় ফেলে সেন্সর বোর্ড চলে না, আইনের সঙ্গে মূল্যবোধকেও বিবেচনা করে। বহু কিছু ছাড় দেওয়া যায়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যৌন ছবি চলচিত্র নয়, বীভৎসতা মূল করে চলচ্চিত্র নয়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের নেতিবাচক ঘটনাগুলোকে পরিহার ও বর্জন করতে চাই। সেক্ষেত্রে চলচ্চিত্র ভূমিকা রাখবে সেটাই কাম্য।
এক্ষেত্রে যদি আইন-কানুনের পরিবর্তন লাগে, কীভাবে সামনের দিকে এগোতে হবে; তার জন্য পরামর্শ চান তথ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে বিবেচনা করতে রাজি আছে।
সভায় আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, তথ্যসচিব মরতুজা আহমদসহ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এমআইএইচ/এইচএ/