ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা-২০১৫

গাইবান্ধায় ৪ শিশু হত্যা, একজনকে গুলি

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
গাইবান্ধায় ৪ শিশু হত্যা, একজনকে গুলি

গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় ২০১৫ সালে ৪ শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা ও সৌরভ নামে এক শিশুকে এমপি লিটনের গুলি সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এসব ঘটনার মধ্যে ৪টি জেলার সুন্দরগঞ্জের ও ১টি গোবিন্দগঞ্জের।



জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম চণ্ডীপুর সিচা গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে সুজন (১০) ও উপজেলার কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের মধ্যপাড়া নাগের খামার গ্রামের বলরাম দাসের মেয়ে শিল্পীকে(৭) পেট্রোলবোমা মেরে, উপজেলার চাচিয়া মীরগঞ্জ বালাপাড়া গ্রামের আশেক আলীর ছেলে শুভ (৫) ও গোবিন্দগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান সরকারের ছেলে আশিকুর রহমান সাম্যকে (১৪) শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বিদায়ী বছরে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ গ্রামের সাজু মিয়ার ছেলে সৌরভকে (৮) গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সুন্দরগঞ্জের সুজন ও শিল্পী নামে দুই শিশুকে পেট্রোলবোমা মেরে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুই শিশুকে নিয়ে তাদের বাবা-মা জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে ঢাকা যাচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে তাদের বহনকারী বাসটি গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের তুলসীঘাট এলাকায় পৌঁছালে সেটি লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা ছোড়ে অবরোধকারীরা।

এতে ঘটনাস্থলেই সুজন ও শিল্পীসহ ৬ জন আগুনে পুড়ে মারা যান। এ ঘটনায় দগ্ধ আরও  দু’জন রংপুর মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনাটি সারাদেশের মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়।

৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বালাপাড়া ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন একটি ডোবার কচুরিপানার নিচ থেকে অপহৃত শুভর অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির উঠান থেকে অপহৃত হয় শিশুটি। পরে মোবাইল ফোনে পনের লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। পরে মুক্তিপণের টাকা নিতে এসে পুলিশের হাতে আটক হন অপহরণকারী দলের সদস্যরা। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শুভর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সুন্দরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ।

একই মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর ঈদের দিন শহরের বর্ধনকুঠি বটতলা মোড় এলাকায় একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান সরকারের ছেলে আশিকুর রহমান সাম্যের বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় সাম্য। সারাদিন খোঁজা-খুঁজির পর রাতে এ ব্যাপারে থানায় জিডি করেন বাবা আতাউর রহমান। পরে সাম্যের বন্ধুসহ সন্দেহভাজনদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে সেপটিক ট্যাঙ্কে মেলে সাম্যের মৃতদেহ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার বিচার দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সাম্য মঞ্চ।

২ অক্টোবর ভোরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্ধ ইউনিয়নের গোপালচরণ (ব্র্যাকমোড়) এলাকায় সৌরভের দুই পায়ে গুলি চালান স্থানীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। ওইদিন ভোরে চাচার সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল শিশুটি। এসময় গাড়িতে বসে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে সৌরভের দুই পায়ে গুলি করে সংসদ সদস্য।

এ ঘটনায় সারাদেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এমপি লিটনের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয় সুন্দরগঞ্জসহ সারাদেশ। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সার্জারি বিভাগে টানা ২৪ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখন পর্যন্ত ভালো ভাবে হাঁটতে-খেলতে পারে না সৌরভ।

এ ঘ্টনার পরদিন রাতে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন সৌরভের বাবা সাজু মিয়া। ১৪ অক্টোবর রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে এমপি লিটনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

১৫ অক্টোবর দুপুরে তাকে গাইবান্ধা জেলা অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সুন্দরগঞ্জ) আদালতে তাকে হাজির করা করা হলে বিচারক মাইনুল হাসান ইউসুফ তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

৮ নভেম্বর অন্তবর্তীকালীন জামিনে কারামুক্ত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
পিসি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।