ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

উনদালের স্বাদে ঐতিহ্য আর নান্দনিকতা

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
উনদালের স্বাদে ঐতিহ্য আর নান্দনিকতা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট থেকে ফিরে: চলছে উনদাল রেস্টুরেন্টের আয়োজন নিয়ে একটি রেডিও লাইভ অনুষ্ঠান। ফোনে যুক্ত হয়ে একজন শ্রোতার প্রশ্ন ‘উনদাল’ অর্থ কি? আরজে নিজেই জানেন না, উনদাল মানে কি?

পরে খোঁজ নিয়ে আরজে জানালেন, ‘উনদাল’ সিলেটের একটি অপ্রচলিত আঞ্চলিক শব্দ।

রান্নাঘরকে সিলেটি ভাষায় উনদাল বলা হয়।

সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দা নন বলে আরজে উনদাল শব্দটি তাৎক্ষণিক ধরতে পারেননি। ভেবেছিলেন, এটি কোনো ফ্রেঞ্চ শব্দ হবে। পরে উনদালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বললেন, ‘উনদাল হলো রান্নাঘর’।

সিলেট শহরের একেবারে মধ্যভাগ পূর্ব জিন্দাবাজারের এই ‘উনদাল কিং কাবাব’-এর স্বাদ নেননি এমন সিলেটি একজনও খুঁজে পাওয়া কঠিন।

ঐতিহ্য আর নান্দনিক আধুনিক এবং খাবারের স্বাদে উনদাল অনেকের এখন প্রিয়। আর ঢাকা থেকে বা সিলেটের বাইরের কেউ একবার উনদালে গেছেন, তো বারে বারে ফিরে এসেছেন খেতে।

নামে যেমন আঞ্চলিকতার পরশ, তেমনি এখানে খাবারে আছে সে রকম একটি মেন্যু। ‘বিফ-সাতকরা’ নামে সিলেটি এই খাবারটি মাংস সাতকরা দিয়ে রান্না করা। সাতকরার সুঘ্রাণ আছে মাংসে।

সাতকরা দিয়ে মাংস না খেলে তার স্বাদ সহজে বোঝানোর মতো নয়। এ খাবারটি এখানে স্পেশাল হিসেবে বেশি চলে। তারপরে যা চলে তা হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি।

এছাড়াও উনদাল স্পেশাল বিরিয়ানিসহ প্রায় ১১০টি খাবার তৈরি হয় এখানে।  

বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অথবা পুরো পরিবার মিলে উনদালে জম্পেশ আড্ডা জমিয়ে খাওয়া যায়।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত আর কাঠের নির্মাণশৈলীর কারুকার্য দিয়েই দোতলা এ রেস্তোরাঁটি তৈরি। টেবিল-চেয়ারও সেই একই আদলের। আর উনদালের দেয়ালজুড়ে সিলেটের ঐতিহ্যের নানা আলোকচিত্র।

উনদালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন বাবলু রাতে নিজেই বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। বাংলানিউজকে তিনি জানাচ্ছিলেন উনদাল প্রতিষ্ঠার গল্প।

বাবু জানালেন, ‘সিলেটে ২০০৭ সালের আগে ভালো খেতে হলে ছুটতে হতো চায়নিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে। আমাদের লক্ষ্য ছিলো, থাই-চাইনিজ আর বাংলা-ইন্ডিয়ান খাবারের মিশ্রণ ঘটিয়ে একটা কিছু করা’।

‘তারপর ২০০৮ সালে উনদাল শুরুর পর এর প্রতি মানুষের বেশ আগ্রহও দেখলাম। যা এখন পর্যন্ত চলছে’।

উনদালের অনুকরণে সিলেটে আরও দু’তিনটি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। তবে উনদাল সিলেট শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে আর তার খাবারের চাহিদা এখনও অটুট।

বাবলু বলেন, ‘আমরা খুব কম বাজটে এটি করেছিলাম। তাতে খরচ হয়েছিলো ৪৫ লাখ টাকার মতো। আমরা ৬ (কাজিন) ভাই মিলে এটি করেছিলাম’।

‘স্থাপত্য ডিজাইন করে দিয়েছিলেন তখন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা আমাদেরই এক বন্ধু রাজন দাস’- বাবলুর কথার সঙ্গে যোগ করেন পাশে বসা তারই এক ভাই।  

বাবলু আবারও বলেন, ‘খাবারের গুণগত মান আমরা ঠিক রাখি। আর পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধব বসে একটু ফূর্তি করে খাবারের স্বাদ যেন নিতে পারেন- সে প্রচেষ্টা শুরু থেকে ছিলো।

কিছুদিন আগে উনদালে বসে খেয়ে গেছেন সিলেটি বংশোদ্ভূত লন্ডন টটেনহামের আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা (সিলেটিরা) ঐতিহ্যগতভবে একটু ভোজনরসিক। আর রুচিশীল খাবার ও নান্দনিক পরিবেশনা আমাদের না থাকলে হয় না। আজকাল সময়ের অভাবে সেসব প্রথা ভেঙ্গে যাচ্ছে। তবে উনদালে বসে খাওয়াটা সে কথা মনে করিয়ে দেয়’।

উনদালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিলো তখন পাশে বসেই উনদাল স্পেশাল বিরিয়ানি খাচ্ছেন আবুধাবি আল-আইন সিটির বাসিন্দা মোহাম্মদ আফজাল ও আহমেদ আজমেল নামক সিলেটি দুই ভাই।

তারা বলেন, ‘চমৎকার পরিবেশনা আর ঘরোয়া একটা পরিবেশ থাকে বলে দেশে এলেই আমরা এখানে খেতে আসি’।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এসএ/এএসআর

** সুখের শুকতারা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।