ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা-২০১৫

লেখক-প্রকাশকদের রক্তে রঞ্জিত বছর

কাজী নাজমুল হক ফয়সাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
লেখক-প্রকাশকদের রক্তে রঞ্জিত বছর ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

ঢাকা: ২০১৫ সালে ঘটে যাওয়া অঘটনের মধ্যে ব্লগার-প্রকাশক হত্যা উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের কিলিং মিশনের শিকার হওয়া সর্বশেষ ব্যক্তি হলেন জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন।

তিনি বিদায়ী বছরের ৩১ অক্টোবর নৃশংসভাবে খুন হন।

এভাবে বছরের শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে আরো ৪ জন ব্লগার-প্রকাশক খুন হন। এছাড়াও রক্তাক্ত ও আহত হতে হয়েছে অনেককেই। দেশের সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে এক বছরে এতো বেশি সংখ্যক লেখক-প্রকাশক-ব্লগার খুন হননি।

৩১ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজের কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফয়সল আরেফিন দীপনকে। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক ও লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের একমাত্র ছেলে। তার মালিকানাধীন জাগৃতি প্রকাশনী অভিজিতের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামের বইটি প্রকাশ করেছিল।

দীপনকে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলাটির বিষয়ে ডিবি পুলিশ বাংলানিউজকে জানিয়েছে, এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। এ ‍ঘটনায় আরও যারা জড়িত, তাদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

একই দিন (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকে নিজের কার্যালয়ে হামলার শিকার হন শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল। তিনি লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক। টুটুলের সঙ্গেই হামলার শিকার হন তার সঙ্গে থাকা ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসু। পরে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী শাহবাগে ব্লগার অভিজিৎ রায়কে যে কায়দায় খুন করা হয়েছিলো প্রকাশ টুটুলের উপরও একই কায়দায় হামলা হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো।

সর্বশেষ পরিচিতজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, টুটুল, তারেক রহিম ও রণদীপম চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলেও তারা পুরোপুরি সুস্থ নন। কোনো না কোনো শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

৭ আগস্ট দুপুরে খুন হন ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নিলয় চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল (৪০)। জুমার নামাজের পর পরই রাজধানীর খিলগাঁও থানা‍র উত্তর গোড়ান এলাকার ১৬৭ নম্বর বাসার ৫ম তলার ফ্ল্যাটের বাসায় ঢুকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহত নিলয়ের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে। তিনি ওই ফ্ল্যাটে স্ত্রী আশামনি সহ ওই ভাড়া বাসায় থাকতেন।

এ ঘটনায় নিলয়ের স্ত্রী আশা মনি বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তরিত হয়। তদন্তের প্রেক্ষিতে কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে ডিবি পুলিশ। তবে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মামলাটির তদন্ত কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।

১২ মে সকালে সিলেটের সুবিদবাজারে নূরানী আবাসিক এলাকায় চৌরাস্তার মোড়ে খুন হন ব্লগার ও সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশ (৩২)। তার বাসার সামনে প্রকাশ্যে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

মুক্তমনা ও সামহোয়্যার-ইন ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করতেন অনন্ত দাশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সক্রিয় ছিলেন। তাকে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছিলো, যেটি বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্তাধীন রয়েছে। এ মামলাটির তদন্ত করছে সিলেটের ডিবি পুলিশ।

৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকার বেগুনবাড়ি দিপীকার ঢাল এলাকায় ওয়াসিকুর রহমান বাবু নামের ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের আরেক কর্মীকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালানোর সময় দেশীয় অস্ত্রসহ হাতেনাতে আটক করা হয় জিকরুল্লাহ ও আরিফুল নামের দু’জনকে। ব্লগার ওয়াসিকুর হত্যার ঘটনায় আটককৃত দু’জনসহ আবু তাহের ও মাসুমের নাম দিয়ে মোট ৪ জনকে আসামি করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভগ্নিপতি।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানিয়েছে, ধর্মীয় মতাদর্শ নিয়ে লেখালেখির বিরোধ থেকে ওয়াসিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয়।

২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী নাফিজা আহমেদ বন্যাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি মারা যান। এটি ছিলো ২০১৫ সালে ব্লগার-প্রকাশকদের মধ্যে প্রথম হত্যা।

অভিজিৎ ও তার স্ত্রী দু’জনই আমেরিকা প্রবাসী। অভিজিৎ মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক। তার লেখা নয়টির বেশি বই রয়েছে। অভিজিতের আরো একটি পরিচয় হলো তিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজয় রায়ের ছেলে।

গোয়েন্দা বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, ব্লগার-প্রকাশকদের কর্মকাণ্ড যেসব লোকদের পছন্দ হতো না তারাই এমনসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন। হত্যাকারীরা সাধারণত ধর্মীয় উগ্রবাদী এবং জঙ্গি দলের সদস্য বলেও জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এনএইচএফ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।