ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেয়েকে হত্যা করে বাবার আত্মহত্যা

রহস্যে ঘেরা সুইসাইড নোট

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
রহস্যে ঘেরা সুইসাইড নোট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: ‘আমার মৃত্যুর জন্য ইনমাস খুলনার পরিচালক ডা. অশোক কুমার পাল দায়ী। আমি অসুস্থ্য হওয়ায় গেস্ট হাউজের নীচে বসতে চাওয়ায় সে আমার সাথে প্রচন্ড র্দূব্যবহার করে ফলে আমি মানাষক ও শারিরীক ভাবে বিপদগ্রস্থ হয়ে এ পথ গ্রহন করলাম।

মোস্তফা কামাল ৫/১/১৬ রাত ১০,০০ টা’।

খুলনায় নিজের প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়া অরিনকে (১৭) হত্যার পর বাবা মোস্তফা কামাল (৫২) চিরকুটে মৃত্যুর কারণ লিখে আত্মহত্যার মাধ্যমে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাদের এ মৃত্যু রহস্য নিয়ে নগরী জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

মোস্তফা কামাল খুলনার পরমাণু শক্তি কমিশনের (ইনমাস) হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার আট্টাকি গ্রামের বাসিন্দা।

উদ্ধারকৃত চিরকুট জব্দ করেছে পুলিশ।

বুধবার (০৬ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে খুলনা মহানগরীর ৮ আহসান আহমেদ রোডের বাসা থেকে বাবা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে সদর থানা পুলিশ।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নগরীর ৮ নম্বর আহসান আহমেদ রোড এলাকার তিনতলা বাড়ির নিচতলায় সপরিবারে ভাড়া থাকতেন মোস্তফা কামাল। তার বড় মেয়ে আইরিন জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ছিল। মঙ্গলবার (০৫ জানুয়ারি) রাত ১০ টার দিকে তারা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

পরে বুধবার (০৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাবা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাত দশটার পর থেকে সকালের মধ্যে যেকোনো সময় এ ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, মাসখানেক আগে মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়ে যাওয়ায় অপারেশনের কারণে মোস্তফা কামালের কোমড়ে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। তিনি রোববার (০৩ জানুয়ারি) অপারেশনের পর পুনরায় অফিসে যোগদান করেন।

খুলনার পরমাণু শক্তি কমিশনের চারতলায় উঠে অফিস করতে তার কষ্ট হতো। যে কারণে তিনি ওই অফিসের পরিচালক ডা. অশোক কুমার পালের কাছে নিচতলায় অফিস করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু তাকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারণে রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।   যে বিষয়টি একটি চিরকুট আকারে ডায়েরিতে লিখে গেছেন। আমরা চিরকুটটি উদ্ধার করেছি।

খুলনা সদর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জিয়া উদ্দিন বলেন, দু’জনের মরদেহ একটি কক্ষের মধ্যে পাওয়া গেছে। ঘরটি ভেতর থেকেই বন্ধ করা ছিল। এর মধ্যে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আর বাবার মরদেহটি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে কারণেই ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েকে হত্যার পর বাবাও আত্মহত্যা করেছেন।

মোস্তফা কামালের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, তিনি ফজরের নামাজের সময় ঘুম থেকে উঠে তার স্বামীকে ডাকার জন্য ঘরের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করেন। পরে জানালা দিয়ে দেখতে পান, ফ্যানের সঙ্গে স্বামী ঝুলছেন। এর পরই প্রতিবেশীদের মাধ্যমে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে স্বামী ও মেয়ের মরদেহ দেখতে পান।

ইয়াসমিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, মাসখানেক আগে ঢাকায় স্পাইনাল কডের অপারেশনের কারণে তার স্বামীর কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। এ কারণে লিফটবিহীন চারতলার অফিসে উঠতে কষ্ট হতো তার। তাই তিনি ওই অফিসের পরিচালক ডা. অশোক কুমার পালের কাছে নিচতলায় অফিস করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু তাকে সে অনুমতি না দিয়ে দুর্ব্যবহার করা হয়।

বিষয়টি তার স্বামী মৃত্যুর আগে একটি চিরকুট আকারে ডায়েরিতে লিখে গেছেন।

চিরকুটে অভিযুক্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড এলায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) খুলনার পরিচালক ডা. অশোক কুমার পালের অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ব্যবহৃত ০১৭৫২-৪১৮৭৪২ মোবাইল নম্বরে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
এমআরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।