ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সাগর-রুনি হত্যা

বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণার চার বছর

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণার চার বছর ফাইল ফটো

ঢাকা: রংপুরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বলেছেন, 'যেটা জানালে আপনারা খুশি হবেন, সে ধরনের অবস্থায় আমরা আসিনি বিধায় জানাচ্ছি না। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে’।


 
বাংলানিউজে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আইজিপি'র এ বক্তব্য পাওয়া যায়।

যদিও দুই সাংবাদিককে হারিয়ে তার পরিবার এবং সহকর্মীদের কাছে কখনোই বিষয়টি খুশির নয়, এটা বিচার পাওয়ার দাবি।  
 
সাগর-রুনিকে হারানোর চার বছরের দরজায় আমরা। গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় অাবারো রিপোর্টের পরিকল্পনা করছে মিডিয়াগুলো। আবারো হাহাকার, বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণার কথা।
 
গত চার বছরে ৩২ বারের মতো একটি ঘটনার পুণরাবৃত্তি হয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু র‌্যাব আদালতে চার্জশিট দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর হাকিম ইউনুস খান নতুন করে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন। এটা আসলে প্রতীক্ষিত পরীক্ষার ফল নয়। এটা বিচার পাওয়ার প্রশ্ন, দেশে আইনের শাসন পাওয়ার অধিকার। যে দু’টি প্রাণ হারিয়ে গেছে চিরতরে, তাদের হত্যার বিচারের অগ্রগতি শোনার আকাঙ্খার মধ্যে খুশি নেই, ক্ষুধা রয়েছে।

কিন্তু বারবার যা শোনেন, সেখানে দুঃখ পান না সাগর-রুনির সহকর্মী-স্বজনেরা। বরং হতাশ হন। সবার অসহায়ত্ব বুঝতে পারা যায়।
 
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সরোয়ার ওরফে সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনি। ঘটনার পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
 
১১ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের দিনই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর দু’দিনের মাথায় ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দফতরের সংবাদ সম্মেলনে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার। তবে চার বছর পরেও তদন্তের অগ্রগতিতে একটুও আশ্বস্ত হতে পারেননি স্বজনেরা।
 
মামলার তদন্তে আলোর দেখা না মিললেও জল গড়িয়েছে অনেক। প্রথমে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
 
এরই মধ্যে অনেককে ধর-পাকড়, অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও বিচার পাওয়ার কোনো আলো দেখাতে পারেননি মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
 
তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল হত্যাকাণ্ডের ৭৫ দিন পর কবর থেকে সাগির-রুনির মরদেহ তুলে ভিসেরা পরীক্ষা করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টে এই সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যার আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি-না তা জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এমন আলামতও পাওয়া যায়নি।
 
সাগর-রুনি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও হাত-পা বাঁধার রশিসহ বিভিন্ন আলামত পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফরেনসিক গবেষণাগারে। এসব আলামত থেকে পৃথক দু’টি পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়ার কথাও ঘোষণা দেয় র‌্যাব। পরবর্তীতে এসব নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য সন্দেহভাজন আরও ২১ জনের ডিএনএ নমুনাও পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েছে র‌্যাব। কিন্তু কারও সঙ্গে সেই ডিএনএ’র নমুনা মেলেনি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়নি।
 
এর আগে-পরে আরো অনেককে আটক করা হয়েছে, রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ৪ বছরেও বিচারের দাবিতে থাকা মানুষদের আস্বস্ত করতে পারেননি দ্বায়িত্বশীলরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
এমএন/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।