ঢাকা: চলচ্চিত্র কিংবা নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে কস্টিউম বার বার পরিবর্তন করা ছিলো আসাদুজ্জামান নূরের কাছে একটি বিরক্তিকর কাজ। আর অভিনয় যদি হতো ধনী লোকের তাহলে তো আরও বিপদ।
যাকে গুরু বলে সম্মোধন করলেন আসাদুজ্জামান নূর। গোলাম মুস্তাফা পরামর্শে পরে শুধু উপরের কোর্ট বদলিয়ে বিরক্তি থেকে স্বস্তি পেয়েছিলেন তিনি।
শুধু নাটক চলচ্চিত্র নয় কবিতায়ও আসাদুজ্মান নূরের একজন গুরু গোলাম মুস্তফা। আবৃত্তি শেষে ভুলগুলো সহজেই বলে দিতেন।
গোলাম মুস্তাফা স্মরণে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত একুশের প্রথম প্রহর উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এমন স্মৃতিচারণে কাতর ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী, বর্তমান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মঞ্চে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
গোলাম মুস্তাফা সম্পর্কে আসাদুজ্জামান নূর আরো বলেন, ‘বাংলা দুর্বল কোন ছবিতেও তিনি যেভাবে সবল অভিনয় করে বেরিয়ে যেতেন সেটা ভাবা যায় না। ’
‘দেখা গেছে ছবিটি হয়তো ততটা ভালো নয় কিন্তু তিনি (গোলাম মুসফা) অসাধারণ অভিনয় করলেন আর এরকম একাধিকবার ঘটেছে বললেন-সংস্কৃতিমন্ত্রী
নূর বলেন, ‘তাকে প্রথম সামনে থেকে দেখি ১৯৬৯ সালে বাংলা একাডেমিতে। সেখানে রবীন্দ্রনাথের রক্ত করবীতে রাজার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন গোলাম মুস্তাফা।
‘তখন মুস্তাফা ভাই এত জনপ্রিয় যে শুরুতে তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চললাম। কিন্তু পরে মিশে দেখি খুব সহজভাবে ভালোবেসে তিনি আপন করে নেন-স্বাধীনতার আগের এসব ঘটনার স্মৃতিচারণ করছিলেন আসাদুজ্জামান নূর।
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রী নূর বলেন, ‘ গোলাম মুস্তাফা হয়তো মিছিলে স্লোগান দেননি, কিন্তু প্রতিটি অনুষ্ঠানে তার আবৃত্তি আর যেসব নাটক তিনি করতেন তা ছিলো অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ’
গোলাম মুস্তাফাকে নিজের গুরু সম্বোধন করে আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, ‘আবৃত্তির জায়গায় তিনি আমাদের সবার গুরু।
আরেকটি স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, ‘একবার ব্রিটিশ কাউন্সিলে দীর্ঘ কবিতা পড়েছিলাম। পড়তে পড়তে মনে হলো-আমি ঠিক পড়ছি না। শেষ করে যখন মুস্তাফা ভাইয়ের পাশে বসলাম- তখন তিনি বললেন-‘ ‘এতো তাড়াহুড়ো করলে কেন। ’’
‘এই যে ভুলটা সহজভাবে ধরিয়ে দেয়া-এটা ভোলা যায় না। আমি ছন্দের গতিটা বুঝে উঠতে পারিনি। তাই আবৃ্ত্তির নিয়ন্ত্রণ আমার হাত থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। ’
ছন্দের গতিটা পূর্ব ধারণা নিয়ে পড়া উচিত-এরকম ছোটখাটো অনেক পরামর্শ তার কাছ থেকে পেয়েছি।
গোলাম মুস্তাফা যেসব কবিতা আবৃত্তি করতেন তার শতকরা ৯৯ ভাগ তার মুখস্ত থাকতো। এমনিক শেক্সপিয়ার থেকেও তিনি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে যেতেন’- বলছিলেন নূর।
সিকান্দর আবু জাফরের ‘বাংলা ছাড়’ কবিতাটি তার কণ্ঠ ছাড়িয়ে এখনও কেউ আবৃত্তি করতে পেরেছে বলে মনে করেন না নূর।
শেষে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর গোলাম মুস্তাফার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সৈয়দ শাসসুল হকের ‘আমার পরিচয় কবিতা ‘আমি জন্মেছি বাংলায়/ আমি বাংলায় কথা বলি- পুরো কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান।
অনুষ্ঠানে আরো আবৃত্তি পরিবেশন করেন গোলাম মুস্তাফার মেয়ে অভিনয় শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, একাত্তারের শব্দ সৈনিক আশরাফুল আলম, ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়।
এছাড়া দ্বিতীয় পর্বে দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলন, সম্বৃতা, স্বরস্বতী, স্বরব্যঞ্জন, কথা, স্রোত, তৃলক, চারুকণ্ঠ, মুক্তধারা, স্বরকল্পন, সঞ্চালনা।
অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে সঞ্চালনায় ছিলেন আয়োজক সংগঠন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মাসকুরে সাত্তার কল্লোল আর দ্বিতীয় পর্বে সঞ্চালনা করেন শিরিন ইসলাম এবং মনিরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময় : ১১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
আরআই