ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যা কিছু অর্জন করেছে, তা মহান ত্যাগের মধ্য দিয়েই অর্জন করেছে। কোনো ত্যাগই বৃথা যায় না।
তিনি বলেন, একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের হারানো ও বিকৃতির কবলে পড়া ইতিহাসকে ফিরিয়ে এনেছি। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসনে পুন:প্রতিষ্ঠিত করেছি। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগ নিয়ে তা সফল করেছি।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের শহীদ এবং এ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার আন্দোলনের শহীদদেরও স্মরণ করেন।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবেই আটচল্লিশে প্রথম সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং ওই বছরের ১৬ মার্চ তার সভাপতিত্বে ঢাবির আমতলায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ভাষার দাবিতে বক্তৃতা করার অপরাধে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কারণেই বার বার গ্রেফতার হন এবং বায়ান্নর ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান।
একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের মাধ্যমে মিছিল করার আগে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ নিয়েছিলেন ছাত্রনেতারা। বঙ্গবন্ধুও এ দাবিতে জেলে অনশন করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করা হলে ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমান যে শহীদ মিনার, সেটি তৈরি করার জন্য প্রথম যে প্রকল্প নেওয়া হয়, তার বাজেট দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের আমলেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির পিতার অবদান রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই দেশের মানুষের হাতেই জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে।
পঁচাত্তরের পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে, তারা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে দেশ ভরিয়ে তোলে। পরবর্তীতে ২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস তুলি ধরি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও অনিয়ম রুখে উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে থাকি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আমাদের সরকারের প্রস্তাবে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সভায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলি। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও মানোন্নয়নে কাজ শুরু করি।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’- আজ ১৯টি ভাষায় ১৯টি দেশের মানুষ এ গান গেয়ে থাকেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। এরপর থেকে অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে নির্যাতন করেছে, ঠিক সেইভাবে বিএনপি নির্যাতন করেছে। বিএনপি দুঃসাহসিক লুটপাট, মানিলন্ডারিং করেছে। কিন্তু ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেশকে উন্নয়নের দিকে নিচ্ছি।
‘গত সাত বছরে আমার দারিদ্র্য কমিয়ে এনেছি, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছি। খাদ্যমজুদ বাড়িয়েছি। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোড মডেল’- বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যে পদ্মাসেতু নিয়ে এতো কথা, আমরা সে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করতে পেরেছি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এমইউএম/টিআই/এএসআর