সিরাজগঞ্জ: ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পরই উত্তাল হয়ে ওঠে সিরাজগঞ্জ।
ঘটনার দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিবিসি রেডিওতে অনেকে এ খবর জানতে পারেন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতার দি স্টেটস্ম্যান পত্রিকায় পুলিশের গুলিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের শহীদ হওয়ার খবর ছাপা হয়। ওই পত্রিকা ট্রেনে করে সিরাজগঞ্জে এলে ফুঁসে ওঠে ছাত্র-জনতা। সেদিন বিভিন্ন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো ব্যাজ ধারণ ও খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করেন ছাত্ররা। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশাল ছাত্রসমাবেশে মুসলিম লীগ নেতাদের সামাজিকভাবে বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তৎকালীন মহকুমা শহর সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন আনোয়ার হোসেন রতু ও জাফর ইমাম ভোলা। বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান তারা।
আনোয়ার হোসেন রতু ও জাফর ইমাম ভোলা বলেন, সিরাজগঞ্জে ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মরহুম সাইফুল ইসলাম। কলকাতা ইত্তেফাক পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরে তিনি ভাষার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ স্কুল-কলেজগুলোতে প্রচারণা শুরু করেন। টিনের চোঙ্গা নিয়ে তার দুই বন্ধু মীর আবুল হোসেন ও নজরুল ইসলাম বিভিন্ন স্কুলের গেটে গিয়ে প্রচারণা চালান। তবে তাদের সেই আহ্বানে যথেষ্ট সাড়া মেলেনি। তারপরও থেমে থাকেননি তারা। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে আমরাও যোগ দিই। পরে আমাদের আন্দোলনে সঙ্গী হন কবি ফররুখ শিয়র, সাহেব আলী, মফিজ উদ্দিন তালুকদার, হাবিবুল আলম, আব্দুল হান্নান তালুকদার, ইকবাল হোসেন, সৈয়দ কায়সার আলী, নির্মল বসাক, শহীদুল ইসলাম তালুকদার, সৈয়দ হায়দার আলী, আবুল কাশেম নুর এলাহী, সাগির মাস্টার, সুনীল ঘোষ, আব্দুর রউফ, আবু বক্কার সিদ্দিক, তাজুল ইসলাম নুরু, মহির উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, তমিজুল ইসলাম, সুবোধ চন্দ্র রায়, মশিউর রহমান টুংকু প্রমুখ।
পুলিশের ভয় উপেক্ষা করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ১৯৫২-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের সঙ্গে সিরাজগঞ্জেও ধর্মঘট পালিত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে বিকেলে সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভা হয়। চৌকি দিয়ে তৈরি করা মঞ্চে চোঙ্গার (হ্যান্ড মাইক হিসেবে ব্যবহৃত) মাধ্যমে বক্তৃতা দেন নেতারা। কয়েকশ’ ছাত্র-জনতা এ জনসভায় অংশ নেন। আর এ সভা থেকেই স্থানীয় বেশ কয়েকজন মুসলিম লীগ নেতাকে সামাজিকভাবে বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর প্রায় সপ্তাহখানেক পরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন সিরাজগঞ্জে আন্দোলনরত ১০/১২ জন ছাত্র। তবুও থেমে থাকেনি আন্দোলন।
মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, ডা. জিতেন্দ্রনাথ নিয়োগী আমাদের বিভিন্ন পরামর্শের পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
প্রবীণ সাংবাদিক রফিকুল আলম খান বলেন, ভাষা আন্দোলনে মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মোতাহার হোসেন তালুকদার, ডা. মহিউদ্দিন খান, ডা. মতিয়ার রহমানসহ সিরাজগঞ্জের অনেক কৃতি সন্তান জাতীয় পর্যায়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। আর সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার আব্দুল মতিন (ভাষা মতিন)। এ কারণেই মফস্বল শহর হলেও ভাষা আন্দোলনে সিরাজগঞ্জের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এসআই