ঢাকা: চাকরিতে নিষিদ্ধ হওয়ার পরে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জিতে অবশেষে বিসিএস ক্যাডারে চাকরি পেলেন মেধাবী শিক্ষার্থী আব্দুল আউয়াল। তাকে পুলিশে চাকরির জন্য মনোনীত করেছে পিএসসি।
২৯তম বিসিএসের চূড়ান্ত তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী আউয়ালকে সাধারণ ক্যাডারে (পুলিশ) নিয়োগ দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেছে পিএসসি।
জেলার নাম ভুল করে পিএসসিতে আবেদন, হয়রানির পর উচ্চ আদালতে লড়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তার এ চাকরি জুটলো।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি জানায়, ২৯তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ সংক্রান্ত কমিশনের ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য বিভ্রাট/প্রশাসনিক কারণে আব্দুল আউয়ালের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছিল।
গত ১০ জানুয়ারি আদালতের আদেশ অনুযায়ী ওই প্রার্থীর স্থগিতকৃত ফলাফল ঘোষণার বিষয়ে সরকারি কর্মকমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশন ২৯তম বিসিএসের প্রার্থী আব্দুল আউয়ালের স্থগিত ফলাফল সাময়িকভাবে ঘোষণা করা হলো।
২০১১ সালের পিএসসি’র বার্ষিক প্রতিবেদন (প্রকাশ ২০১২) থেকে জানা যায়, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র আব্দুল আউয়াল জানতে পারেন তিনি চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেছেন। গত বছর এ বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে।
ওই সময়ের তথ্যানুযায়ী, আব্দুল আউয়ালকে পিএসসি জানিয়েছিল, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রথম হওয়ার মতো নয়। এ বিষয়ে কোনো তদন্তও করেনি পিএসসি। তদন্ত ছাড়াই তাকে সরকারি চাকরি থেকেও বঞ্চিত করা হয়।
বার্ষিক প্রতিবেদনে আউয়ালের নাম আসায় পিএসসির দু’জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে পিএসসি। নিজের অধিকার আদায়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন আউয়াল। আদালত তাকে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ওই সময় আউয়াল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিনি ভুল করে ফরমে নিজ জেলা কুমিল্লার স্থলে বান্দরবান ঘর ভরাট করেন।
বিষয়টি নিয়ে পিএসসি’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে যোগাযোগ করে তিনি জানান, ফরম পূরণের দিন তার বোন মারা গিয়েছিলেন, এ কারণে ভুল হয়। ২০১১ সালের মে মাসে পিএসসিতে গিয়ে পরীক্ষার বোর্ডে লিখতে দেওয়া প্রশ্নের উত্তর না মেলায় একজন সদস্য তাকে গালাগাল করেন। বলা হয়, তিনি অসুদপায় অবলম্বন করেছেন। তার উত্তর ছিল, দু’বছর আগের সঙ্গে এখনকার প্রশ্নের উত্তরের হেরফের হতে পারে। এ সময় তাকে হেনস্তা করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে নিষিদ্ধ হন তিনি।
এসব বিষয়ে সোমবার পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছার উদ্দিনের মোবাইলে ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
পিএসসি’র একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এই সেই আউয়াল, যিনি আলোচিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আব্দুল আউয়ালকে আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রদত্ত তথ্য, ডকুমেন্টস, সনদ ইত্যাদি তার নিয়োগের আগে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাগজপত্রের সত্যতা যাচাইপূর্বক নিশ্চিত হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রদান করবে।
এতে আরও বলা হয়, মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যোগ্য ঘোষণা ও যথাযথ এজেন্সি কর্তৃক প্রাক-নিয়োগ জীবন বৃত্তান্ত যাচাইয়ের পর সরকার কর্তৃক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৯তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেবার মোট ৫ হাজার ৬২ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭২২ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়।
এর আগে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে শুরু হয় ২৯তম বিসিএসের কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর